৫ শ্রেণীর সালাত আদায়কারী/নামাজীর বর্ণনা
নামাজ ইসলামের ২য় স্তম্ভ। মুসলিমদের পরিচয় এবং কাফেরদের সাথে মুসলিমদের পার্থক্য হয় এই নামাজের দ্বারা। আবার নামাজ শুধু পড়লেই হয়ে যায় না। নামাজের মধ্যে রয়েছে নিয়মনীতি, বিশুদ্ধতা আর কতটা সুন্নত অনুযায়ী হচ্ছে সে দিকে খেয়াল রাখা। আমরা এখানে ৫ শ্রেণীর নামাজীর আলোচনা করবো। চলুন মিলিয়ে দেখি কে কোন শ্রেণিতে আছি---
১/ যারা নিজেদের সাথে নিজেরাই অন্যায় আচরণ করে। এরা ভালোভাবে অযু করে না, সঠিক সময়ে সালাত/নামাজ পড়ে না এবং এটা নিশ্চিত হয় না যে সালাতের/নামাজের সব জরুরী অংশগুলোই সে পালন করছে।
ফলাফলঃ এই শ্রেণির
নামাজীরা নামাজ পড়েও শাস্তির সম্মুখীন হবেন। কেননা
এরা নামাজের ব্যাপারে উদাসীন। দেখে মনে হবে না যে, এরা আসলে নামাজে আছেন।
*** তাহলে বে-নামাজীরা চিন্তা করুন আপনাদের জন্য কি অপেক্ষা
করছে.......
২/ এ প্রকারের নামাজীরা শুধু নামাজের বাইরের প্রয়োজনীয় অংশগুলোই পালন করে। তারা সময়মত সালাত/নামাজ পড়ে এবং ঠিক মত অযু করে কিন্তু তারা নিজের সাথে যুদ্ধে পরাজিত হয় এবং শয়তানের কুমন্ত্রণার সাথে এক হয়ে যায়।
ফলাফলঃ এ সকল শ্রেনীর নামাজীদের জন্য রয়েছে জবাবদিহিতা
। কেননা তারা খুশু অবলম্বনে ব্যর্থ এবং শয়তানের ধোকা থেকে বাঁচার চেষ্টাও করছে না।
৩/ যে সব সালাত আদায়কারী/নামাজী নামাজের বাইরের নিয়মাবলী মেনে চলে, সময়মত সালাত/নামাজ পড়ে, ঠিকমতো অযু করে, নিজের সাথে এবং শয়তানের ওয়াসওয়াসার সাথে যুদ্ধ করে, কিন্তু সে সব সময় তার শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধে আচ্ছন্ন থাকে পাছ শয়তান নামাজ থেকে তাকে চুরি করে অন্যত্র নিয়ে যায়। সে নামাজ ও জিহাদ একই সাথে চালিয়ে যায়।
ফলাফলঃ ৩য় শ্রেনী সংগ্রাম করছে সুতরাং তারা পাপী বলে গণ্য হবে না।
৪/ চতুর্থ প্রকারের নামাজী হলো সে যে নামাজ পড়তে দাঁড়ায় এবং নামাজের সব শর্তই পূরণ করে, তাঁর সম্পূর্ণ হৃদয় নামাজেই কেন্দ্রীভূত থাকে, সে থাকে সদা সতর্ক যাতে কোন কিছু বাদ না যায়। তাঁর চিন্তাই থাকে কিভাবে নামাজকে যথাযথ এবং পরিপূর্ণভাবে সম্পূর্ণ করা যায়। নামাজে আল্লাহর ইবাদতে তার হৃদয় থাকে গভীরভাবে নিমজ্জিত।
ফলাফলঃ ৪র্থ শ্রেনী পুরস্কারপ্রাপ্ত। তারা
নামাজের সকল বিষয় পরিপূর্ণভাবে পালন করতে সক্ষম। এমনকি
শয়তানের সাথে যুদ্ধেও এরা বিজয়ী।
৫/ এ শ্রেনীর নামাজী হলো সে যে এগুলোর সবই করে এবং সে তাঁর হৃদয়কে আল্লাহর কাছে সমর্পন করে, হৃদয় দিয়ে আল্লাহর দিকে তাকায় এবং তার সব চিন্তা ভাবনাকে আল্লাহতে কেন্দ্রীভূত করে এবং আল্লাহর প্রতি সে ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধাবোধে পরিপূর্ণ হয়; মনে হয় সে যেন সত্যিই আল্লাহকে দেখছে। শয়তানের ওয়াসওয়াসা এবং তার চিন্তাসমূহ ধুলিসাৎ হয়ে যায় এবং এই নামাজী এবং তার প্রভুর মধ্যকার সকল প্রতিবন্ধকতা তুলে নেওয়া হয়। তার নামাজের সাথে অন্য কোন ব্যক্তির নামাজের পার্থক্য হলো জান্নাত ও জাহান্নামের পার্থক্য থেকেও বেশি। এই ব্যক্তি যখন নামাজ পড়ে সে তার মালিকের চিন্তায় আচ্ছন্ন থাকে এবং তাঁর প্রতি সে সন্তুষ্ট থাকে।
ফলাফলঃ ৫ম শ্রেনী মহান রাব্বুল আলামীনের খুব কাছের মানুষ কারণ সে হলো তাদের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত যাদের কাছে নামাজ হলো আনন্দ এবং প্রশান্তির উৎস। এই দুনিয়ার জীবনে যারা নামাজের মধ্যে আনন্দ পাবে তারা ঐ জীবনে আল্লাহর সান্নিধ্য পাওয়ার সুযোগ পাবে এবং এ জীবনেও তারা আল্লাহর মাঝে পাবে অফুরন্ত আনন্দ। আর যারাই এই আনন্দ লাভ করবে তারা আল্লাহর দেওয়া পার্থিক উন্নতি এবং সব কিছুতেই সন্তুষ্ট থাকবে। আর যারা আল্লাহর মাঝে এই আনন্দ পাবেনা তারা তাদের দুনিয়াবী বস্তুর জন্য অনুতাপে এবং তীব্র শোকে ধ্বংস হয়ে যাবে। (আল-ওয়াবিলুস সায়্যিব, ৪০)
তথ্যসূত্রঃ
নামাজের খুশু উন্নয়নের ৩৩ উপায় (সালেহ আল মুনাজ্জিদ), পৃষ্ঠা , ৪৯-৫০।
আরও পড়ুন....
নামাজে মনোযোগী হওয়ার উপায় - ০১
কিভাবে আল্লাহ তায়ালার ভালোবাসা পাবেন ?
0 Comments