কবিরা গুনাহ- পর্ব (০১)
শিরক - আল্লাহর সঙ্গে কোনকিছু শরিক করা
সবচেয়ে বড় গুনাহ হলো কাউকে আল্লাহর সমকক্ষ মনে করা । এজাতীয় গুনাহ দুই প্রকার।
প্রথম প্রকারের শিরক হলো---
আল্লাহর সত্তার সঙ্গে কাউকে শরিক করা এবং তাকে ব্যতীত অন্য কারো ইবাদত জায়েজ বা বৈধ মনে করা। যেমন পাথর, গাছ, সূর্য, চন্দ্র, নবী, ওস্তাদ , সাহেব, পীর, তারকা, রাজা-বাদশা অথবা অন্য কোন বস্তুর সঙ্গে আল্লাহ তায়ালাকে শরীক সাব্যস্ত করা।
এই মারাত্মক গুনাহ আলোচনা করতে গিয়ে কুরআনুল কারীমে ইরশাদ হয়েছে---
اِنَّ اللّٰہَ لَا یَغۡفِرُ اَنۡ یُّشۡرَکَ بِهٖ وَیَغۡفِرُ مَا دُوۡنَ ذٰلِکَ لِمَنۡ یَّشَآءُ ۚ وَمَنۡ یُّشۡرِکۡ بِاللّٰهِ فَقَدِ افۡتَرٰۤی اِثۡمًا عَظِیۡمًا
নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তাঁর সঙ্গে শরীক করা ক্ষমা করেন না। এটা ব্যতীত অন্যান্য অপরাধ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন ; আর যে কেউ আল্লাহ্ র শরীক করে সে এক মহাপাপ করে।
—আন নিসা - ৪৮
অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,
وَاِذۡ قَالَ لُقۡمٰنُ لِابۡنِهِ وَهُوَ یَعِظُهُ یٰبُنَیَّ لَا تُشۡرِکۡ بِاللّٰهِ ؕؔ اِنَّ الشِّرۡكَ لَظُلۡمٌ عَظِیۡمٌ
স্মরণ কর, যখন লুকমান উপদেশচ্ছলে তার পুত্রকে বলেছিল, ‘হে বৎস! আল্লাহ্ র কোন শরীক কর না। নিশ্চয়ই শিরক চরম জুলুম।’
—লোকমান - ১৩
আরেক আয়াতে আল্লাহ তা'আলা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন--
اِنَّهُ مَنۡ یُّشۡرِکۡ بِاللّٰهِ فَقَدۡ حَرَّمَ اللّٰهُ عَلَیۡهِ الۡجَنَّةَ وَمَاۡوٰىهُ النَّارُ ؕ وَمَا لِلظّٰلِمِیۡنَ مِنۡ اَنۡصَارٍ
’ কেউ আল্লাহ্ র শরীক করলে আল্লাহ্ তার জন্যে জান্নাত অবশ্যই নিষিদ্ধ করবেন আর তার আবাস জাহান্নাম। জালিমদের জন্যে কোন সাহায্যকারী নেই।
—আল মায়িদাহ - ৭২
মোটকথা যে ব্যক্তি কাউকে আল্লাহর সমকক্ষ স্থাপন করে এবং ঐ অবস্থায় যদি তার মৃত্যু হয় তাহলে সে নিঃসন্দেহে জাহান্নামী।
তদ্রুপ কোন ঈমানদার যদি ঈমানের হালাতে ইন্তেকাল করে তাহলে সে নিশ্চিত জান্নাতবাসি হবে। তবে কোনো পাপ করে থাকলে তার জন্য কিছুকাল জাহান্নামের আগুনে জ্বলতে হবে।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, সাতটি ধ্বংসকারী বিষয় থেকে তোমরা বিরত থাকবে। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! সেগুলো কী? তিনি বললেন, (১) আল্লাহ্র সাঙ্গে শরীক করা (২) যাদু (৩) আল্লাহ তা‘আলা যাকে হত্যা করা হারাম করেছেন, শরীয়ত সম্মত কারন ব্যতিরেকে তাকে হত্যা করা (৪) সুদ খাওয়া (৫) ইয়াতীমের মাল গ্রাস করা (৬) রণক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যাওয়া এবং (৭) সরল স্বভাবা সতী-সাধ্বী মু’মিনাদের অপবাদ দেয়া।
(সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২৭৬৬)
শিরকের দ্বিতীয় প্রকার হলো---
কোনো কাজের লোক দেখানো মনোভাব অবলম্বন করা। যেমন আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন ---
قُلۡ اِنَّمَاۤ اَنَا بَشَرٌ مِّثۡلُکُمۡ یُوۡحٰۤی اِلَیَّ اَنَّمَاۤ اِلٰـهُکُمۡ اِلٰهٌ وَّاحِدٌ ۚ فَمَنۡ کَانَ یَرۡجُوۡا لِقَآءَ رَبِّهٖ فَلۡیَعۡمَلۡ عَمَلًا صَالِحًا وَّلَا یُشۡرِکۡ بِعِبَادَۃِ رَبِّهٖ اَحَدًا
বল, ‘আমি তো তোমাদের মত একজন মানুষই, আমার প্রতি প্রত্যাদেশ হয় যে, তোমাদের ইলাহ্ একমাত্র ইলাহ্। সুতরাং যে তার প্রতিপালকের সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম করে ও তার প্রতিপালকের ‘ইবাদতে কাউকেও শরীক না করে।’
—আল কাহাফ - ১১০
হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা ছোট শিরক থেকে বেঁচে থাকো। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন , আল্লাহর রাসূল, ছোট শিরক কি? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন, লোক দেখানো ইবাদত (রিয়া)।
(মুসনাদে আহমাদ)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন, আল্লাহ তায়ালা বলেন, কেউ যদি কোন ভাবে আমার সঙ্গে কাউকে শরিক করে তা হলে ওই আমল শরিকের বলেই গণ্য হবে। আমি তা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। অর্থ্যাৎ ওই আমলের সঙ্গে না আমার কোন সম্পর্ক থাকবে, না আমি তা কবুল করবো, না তার প্রতিদান দিবো।
(মুসলিম, ইবনে মাজাহ)
অন্য এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, বহু রোজাদার এমন আছে, যাদের উপোস থাকা ছাড়া কাজের কাজ কিছুই হয় না। বহু রাত্রি জাগরণকারী এমন আছে, যাদের নিদ্রাহীন থাকা ছাড়া কিছুই অর্জিত হয় না।
{ ইবনে মাজাহ, তাবারনি, মুসনাদে আহমদ }
অর্থ্যাৎ যখন ওই নামাজ, রোজা আল্লাহ তায়ালা ছাড়া অন্যকারো উদ্দেশ্যে হবে তখন তার কোনই প্রতিদান মিলবে না।
তথ্যসূত্রঃ
কিতাবুল কাবায়ের { ঈমাম আয যাহাবী (র)}
আরও পড়ুন....
সাক্ষী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট (অলৌকিক ঋণ ফেরতের গল্প)
কুষ্ঠরোগী, টাকমাথাওয়ালা এবং অন্ধের গল্প
2 Comments
আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন।
ReplyDeleteAbc
ReplyDelete