মানুষের চাওয়া শেষ হয় না, কবরে না পৌছা পর্যন্ত

 

লোভ থেকে দূরে থাকুন



মানুষের চাওয়া, আশা, আকাঙ্ক্ষা জন্ম থেকেই শুরু। যেখানে শিশু অবস্থায় পেটের চাহিদা পূরণ করতে চায় কিন্তু যত সময় বাড়ে চাহিদার মাত্রা তত বৃদ্ধি পায়। মানুষের চাহিদা দোষণীয় নয় যদি না তার চাহিদার মাত্রা অতিক্রম করে। 

আব্দুল্লাহ বিন শিখ্খির (রাঃ) তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, আমরা নাবী (সাঃ)-এর নিকট হাজির হলাম। এমন সময় তিনি বললেন :

اَلۡہٰکُمُ  التَّکَاثُرُ ۙ﴿۱ 

{প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতা তোমাদেরকে ভুলিয়ে রেখেছে।} (সুরা তাকাসুর, ১)

আদম সন্তান বলে : আমার সম্পদ-আমার সম্পদ, অথচ তোমার সম্পদ তো সেটুকুই যা তুমি খেয়েছো এবং পরিধান করে ছিড়ে ফেলেছো অথবা সাদকা করে অবশিষ্ট রেখেছো। 

(সহীহ মুসলিম হা. ২৯৫৮)

বস্তুত অধিক ধনলিপ্সা ও প্রভাব-প্রতিপত্তির আকাংক্ষা মানুষকে আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্য এবং আখেরাতের চিন্তা হতে গাফেল রাখে। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত এ আকাঙ্ক্ষার শেষ হয় না। আর এটি মানুষের একটি স্বভাবগত প্রবণতা। কাফির-মুশরিকরা এতে ডুবে থাকে। কিন্তু মু’মিন এ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখে এবং সর্বদা আখেরাতের জন্য প্রস্তুত থাকে। 

[তাফসিরে ফাতহুল মাজীদ, সুরা তাকাসুর ১ নং আয়াতের তাফসির ]

حَتّٰی زُرۡتُمُ  الۡمَقَابِرَ ؕ﴿۲ 

{যতক্ষণ না তোমরা কবরের সাক্ষাৎ করবে।}(সুরা তাকাসুর, ২)

অর্থাৎ যতক্ষণ না তোমাদের মৃত্যু এসে যায়। অতঃপর তোমরা কবরস্থানে পৌঁছে যাও ও তার বাসিন্দা হয়ে যাও। কবরে যাওয়া পর্যন্ত তোমরা দুনিয়াবী প্রাচুর্যের লালসায় লিপ্ত থাক। মানুষের জীবন আনুমানিক ৬০ থেকে ৭০ বছর। অধিকাংশ মানষই এ সময়ের মাঝেই দুনিয়া ছেড়ে চলে যায়। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন : আমার উম্মাতের আয়ু ৬০ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে হবে। খুব কম সংখ্যকই তা অতিক্রম করবে। 

(তিরমিযী হা. ৩৫৫০, মিশকাত হা. ৫২৮০, সহীহ) 

এ অল্প সময়ের জীবনের মাঝে শৈশবের দুর্বলতায় চলে যায় ১৫-১৬ বছর, যৌবন কাল মাত্র ১৬-৪০ বছর তারপর আবার বার্ধ্যকের দুর্বলতা চলে আসে। অতঃপর চলে যেতে হয় অনন্ত কালের জন্য আখিরাতে। সুতরাং এ ক্ষণিক সময়ের জন্য মানুষের এত ব্যস্ততা যে, সে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করার সময়ও পায় না। 

[তাফসিরে ফাতহুল মাজীদ, সুরা তাকাসুর ২ নং আয়াতের তাফসির]

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন : তুমি দুনিয়াতে এমনভাবে বসবাস কর যেন তুমি একজন আগন্তুক অথবা মুসাফীর। (অর্থাৎ মুসাফীর যেমন পথিমধ্যে রাত্রি যাপন করার জন্য কোনরকম একটি তাঁবু তৈরি করে রাত অতিক্রম করে ঠিক সেভাবেই তোমরা দুনিয়াকে মূল্যায়ন কর) 

(সহীহ বুখারী হা. ৬৪১৬)।

আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ দুনিয়ার প্রতি ভালবাসা, দুনিয়া পাওয়ার প্রচেষ্টা তোমাদেরকে আখেরাতের প্রত্যাশা এবং সৎকাজ থেকে বেপরোয়া করে দিয়েছে। তোমরা এ দুনিয়ার ঝামেলাতেই লিপ্ত থাকবে, হঠাৎ মৃত্যু এসে তোমাদেরকে কবরে পৌঁছিয়ে দিবে।

হযরত হাসান বসরী (রঃ) বলেন যে, মানুষের ধন সম্পদ ও সন্তান সংখ্যা বৃদ্ধির লালসা তার মৃত্যুর চিন্তাকে দূরে নিক্ষেপ করেছে।

হযরত কাতাদা (রঃ) বলেনঃ মানুষ নিজের প্রাচুর্যের ব্যাপারে অহংকার করছে আর একে একে কবরে গিয়ে প্রবেশ করছে। অর্থাৎ প্রাচুর্যের আকাক্ষা তাকে উদাসীনতায় নিমজ্জিত রেখেছে এমতাবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে এবং সমাধিস্থ হয়েছে। 

[ তাফসিরে ইবনে কাসির, সুরা তাকাসুর ১-২ নং আয়াতের তাফসির]

মহা প্রতাপান্বিত আল্লাহ বলেনঃ কখনো নয়, যদি তোমরা নিশ্চিতরূপে অবগত হতে তবে এরূপ দাম্ভিকতার মধ্যে পতিত থাকতে না। অর্থাৎ মৃত্যুর মুহূর্ত পর্যন্ত নিজেদের শেষ মনযিল আখেরাত সম্পর্কে উদাসীন থাকতে না। এরপর প্রথমোক্ত বিষয়ের বর্ণনা প্রসঙ্গে আল্লাহ্ বলেছেনঃ তোমরা তো জাহান্নাম দেখবেই। সেই জাহান্নামের ভয়াবহতা এক নযর দেখেই ভয়ে-ভীতিতে অন্যেরা তো বটেই, আম্বিয়ায়ে কিরামও হাঁটুর ভরে পড়ে যাবেন।  ওর কাঠিন্য ও ভীতি প্রত্যেকের অন্তরে ছেয়ে যাবে।

এরপর অবশ্যই সেইদিন তোমাদেরকে নিয়ামত সম্বন্ধে প্রশ্ন করা হবে। স্বাস্থ্য, সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য নিরাপত্তা, রিযিক ইত্যাদি সকল নিয়ামত সম্বন্ধেই প্রশ্ন করা হবে। এসব নিয়ামতের কতটুকু কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়েছে তা জিজ্ঞেস করা হবে। 

[তাফসিরে ইবনে কাসির, সুরা তাকাসুর]

রাসূলুল্লাহ্ (সঃ)-এর আযাদকৃত দাস হযরত আবূ উসায়েব (রাঃ) বলেনঃ “একদা রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) আমার পার্শ্ব দিয়ে গমন করে আমাকে ডাক দেন। তারপর হযরত আবূ বকর (রাঃ) ও হযরত উমার (রাঃ)-এর পার্শ্ব দিয়ে গমন করেন এবং তাদেরকেও ডেকে নেন। তারপর এক আনসারীর বাগানে গিয়ে বললেনঃ “দাও ভাই, খেতে দাও।” আনসারী তখন এক গুচ্ছ আঙ্গুর এনে দিলেন। রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) এবং সঙ্গীরা তা ভক্ষণ করলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) আনসারীকে বললেনঃ “ঠাণ্ডা পানি নিয়ে এসো।” আনসারী পানি এনে দিলে রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) এবং তাঁর সঙ্গীরা তা পান করলেন। তারপর নবীকরীম (সঃ) বললেনঃ “কিয়ামতের দিন এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।”এ কথা শুনে হযরত উমার (রাঃ) খেজুর গুচ্ছ উঠিয়ে মাটিতে ছুঁড়ে ফেলে বললেনঃ “এ সম্পর্কেও জিজ্ঞাসিত হতে হবে?” রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) উত্তরে বললেনঃ “হ্যা। তবে তিনটি জিনিস সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে না। তা হলো সম্ভ্রম রক্ষার উপযোগী পোশাক, ক্ষুধা নিবৃত্তির উপযোগী খাদ্য এবং শীত-গ্রীষ্ম থেকে রক্ষা পাওয়ার উপযোগী গৃহ।” 

(এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রাঃ) বর্ণনা করেছেন)

আল্লাহ তায়ালা আমাদের হেফাজত করুন। 

আমিন.......


আরও পড়ুন....

৫ প্রকার সালাত আদায়কারী/নামাজী, আপনি কোন প্রকারে?

ঈমাম নববীর (রহ) ৪০ হাদিস পিডিএফ








Post a Comment

0 Comments