নামাজে খুশুর গুরুত্ব
ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহারিক স্তম্ভ হলো সালাত/নামাজ এবং খুশু হলো শরিয়াহ কর্তৃক স্বীকৃত একটি আবশ্যকিতা।
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন,
আর আল্লাহর সামনে দাড়াও একান্ত আদবের সাথে (বিনয়ী হয়ে)।
(২/সুরা বাকারাহঃ ২৩৮)
আল্লাহ তায়ালা আরও বলেনঃ
তোমরা ধৈর্য এবং সালাত/নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থণা কর। নিশ্চয় এটা বিনয়ী ব্যতিত অন্যদের নিকট খুবই কঠিন।
(২/সুরা বাকারাহঃ ৪৫)
শয়তানের অন্যতম প্রধান ষড়যন্ত্র হলো যে কোন প্রকারে মানুষকে সালাত/নামায থেকে ফিরিয়ে রাখা এবং সালাতের/নামাযের সময় তাদেরকে বিভ্রান্ত করা যাতে তারা ইবাদাতের মূল আনন্দ এবং পুরষ্কার থেকে বঞ্চিত হয় । আমাদের সালাতের/নামাজের সাথে যখন খুশু সরাসরি সম্পর্কযুক্ত হয় তখন শয়তানের প্রথম কাজই হয় সালাতের/ নামাযের খুশু থেকে ভুলিয়ে ভালিয়ে সরিয়ে দেওয়া এবং শেষ কাজ হয় সালাত/নামাজ থেকে বিরত রাখা। বলা হয় যে এমন নামাজী/সালাত আদায়কারী লোকও থাকবে যার মাঝে ভালত্বের লেশ নেই এবং মসজিদে ঢুকে দেখা যাবে সেখানে কারো মাঝে খুশু নেই।
[আল মাদারিজ, ইবনুল কাইয়্যুম (র), ১/৫২১]
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,
“মুমিনগণ সফলকাম হয়ে গেছে, যারা নিজেদের সালাতে/নামাজে বিনয়ী।
(২৩/১-২)
অর্থ্যাৎ তারা আল্লাহকে ভয় করে এবং সালাতে/নামাজে শিষ্টতা বজায় রাখে। খুশু এর অর্থই হলো স্থির, প্রশান্ত, চুপচাপ, গার্ম্ভীযপূর্ণ, বিনীত এবং নম্র। একজন লোকের খুশু আছে এর অর্থ হলো সে আল্লাহকে ভয় করে এবং অন্তরে এটা অনুভব করে যে আল্লাহকে সে দেখছে। খুশু অর্থ হলো আত্মা বা হৃদয়কে আল্লাহর সামনে অত্যন্ত বিনীত, নম্র এবং অনুগতভাবে দাঁড় করানো।
(আল মাদারিজ, ১/৫২০)
আল্লাহ তায়ালা খুশু ধারণকারীদের ব্যাপারে বলেনঃ
اِنَّ الۡمُسۡلِمِیۡنَ وَالۡمُسۡلِمٰتِ وَالۡمُؤۡمِنِیۡنَ وَالۡمُؤۡمِنٰتِ وَالۡقٰنِتِیۡنَ وَالۡقٰنِتٰتِ وَالصّٰدِقِیۡنَ وَالصّٰدِقٰتِ وَالصّٰبِرِیۡنَ وَالصّٰبِرٰتِ وَالۡخٰشِعِیۡنَ وَالۡخٰشِعٰتِ وَالۡمُتَصَدِّقِیۡنَ وَالۡمُتَصَدِّقٰتِ وَالصَّآئِمِیۡنَ وَالصّٰٓئِمٰتِ وَالۡحٰفِظِیۡنَ فُرُوۡجَہُمۡ وَالۡحٰفِظٰتِ وَالذّٰکِرِیۡنَ اللّٰہَ کَثِیۡرًا وَّالذّٰکِرٰتِ ۙ اَعَدَّ اللّٰہُ لَہُمۡ مَّغۡفِرَۃً وَّاَجۡرًا عَظِیۡمًا
অবশ্যই আত্মসমর্পণকারী পুরুষ ও আত্মসমর্পণকারী নারী, মু’মিন পুরুষ ও মু’মিন নারী, অনুগত পুরুষ ও অনুগত নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও সত্যবাদী নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ ও ধৈর্যশীল নারী, বিনীত পুরুষ ও বিনীত নারী, দানশীল পুরুষ ও দানশীল নারী, সাওম পালনকারী পুরুষ ও সাওম পালনকারী নারী, যৌন অংগ হিফাযতকারী পুরুষ ও যৌন অংগ হিফাযতকারী নারী, আল্লাহ্কে অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও অধিক স্মরণকারী নারী-এদের জন্যে আল্লাহ্ রেখেছেন ক্ষমা ও মহা-প্রতিদান।
—আল আহ্যাব - ৩৫
খুশু’র অনেক উপকারের একটি হলো এটা সালাত/নামায কে সহজতর করে। আল্লাহ
তায়ালা বলেনঃ
তোমরা ধৈর্য এবং সালাত/নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থণা কর। নিশ্চয় এটা বিনয়ী ব্যতিত অন্যদের নিকট খুবই কঠিন।
(২/সুরা বাকারাহঃ ৪৫)
এর অর্থ হলো সালাতের/নামাযের বোঝা খুবই ভারী তবে যাদের হৃদয়ে খুশু আছে তাদের জন্য নয়। (তাফসির ইবনে কাসির, ১/১২৫) বরং খুশু ওয়ালাদের কাছে সালাত/নামাযটা অত্যন্ত আনন্দের এবং উপভোগের কিন্তু বাস্তবতা হলো, এই অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি খুব সহজেই হারিয়ে যায় এবং এই সময়ের লোকদের মধ্যে কদাচিৎ এটা অনুভূত হয়। রাসুলুল্লাহ (সা্ঃ) বলেছেনঃ
আমার উম্মতের মধ্যে থেকে সর্বপ্রথম যা উঠিয়ে নেয়া হবে তা হলো খুশু। এবং তখন তুমি একটি লোকের মধ্যেও খুশু পাবে না।
(সহিহ আত তারগীব, ৫৪৩)
অধিকতম নির্ভেজাল মতানুযায়ী খুশু বাধ্যতামূলক। শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ (র) সুরা বাকারার উপরিল্লিখিত ৪৫ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন যে এই আয়াত খুশু বিহীন লোকদের নিন্দার ইঙ্গিত করে। আর নিন্দা বা দোষারোপ তখনই করা হয় যখন কোন আবশ্যক কাজ অবজ্ঞা করা হয় অথবা নিষিদ্ধ কাজ করা হয়। যাদের খুশু নেই যদি তারা নিন্দার যোগ্য হয়- তবে এটা নির্দেশ করে যে খুশু বাধ্যতামূলক (ওয়াজিব)। খুশু যে অবশ্য করণীয় তা এই আয়াতও নির্দেশ করেঃ
আর যারা নিজেদের সালাতসমূহে যত্নবান থাকে। তারাই হবে অধিকারী। অধিকারী হবে ফিরদাউসের যাতে এরা স্থায়ী হবে।
(২৩/সুরা মু’মিনুন, ৯-১১)
আল্লাহ তায়ালা বলেন যে এই খুশু ওয়ালারা হল তারা যারা ফিরদৌসের উত্তরাধিকারী। বস্তুতঃ নামাজের/সালাতের মধ্যে স্থিরতা এবং খুশু সালাত/নামাজেরই অন্তর্ভুক্ত। অনেকেই বলেন প্রকৃত খুশুর
অর্থ
হলো ‘খুদু’ যার অর্থ আনুগত্য, আত্মসমর্পণ এবং বিনয়। কাকের ঠোকরানোর মত কেউ সিজদা করলেই বলা যাবে না যে তার খুশু আছে। যদি কেউ রুকু থেকে মাথা সম্পূর্ণ না তোলে এবং সিজদায় যাবার আগে কিছুক্ষণের জন্য বিরতি না দেয় তবে তাকে কখনই স্থির বা বিনয় বলা যায় না। বিনয় বা স্থিরতা হল এমন কিছু যা পরিমিত, ধীর-স্থির ও ছন্দপূর্ণ।
সুতরাই কোন ব্যক্তির স্থিরতা স্থিরতা নয় যদি না তার পরিমিতিবোধ থাকে। যার সালাতে/নামাযে বিনয় নেই তার সালাতে/নামাযে খুশু’ও নেই। যার স্থিরতা নেই তার রুকু অথবা সিজদায় খুশু নেই; আর যার খুশু নেই তার নামাযে/সালাতে অবশ্যই ভেজাল আছে। অনেকেই বলেন হয়তবা সালাত/নামায পড়ছে না, পাপ অর্জন করছে। এ ব্যাপারে রাসূল (সা্ঃ) সতর্ক করে বলেন, যাদের সালাতে/ নামাযে খুশু নেই তাদের অবস্থা এরুপ যে সালাতে তারা দৃষ্টিকে আকাশের দিকে নিবদ্ধ করেছে। সালাতে অস্থিরতা, নড়াচড়া এবং দৃষ্টিকে উপরে তোলা খুশু বর্হিভূত কাজ।
(মাজমাউল ফাতওয়া, ২২/৫৫৩-৫৫৮)
খুশুর গুণাগুণ এবং এর অবহেলা কারীদের সতর্ক করে দিয়ে রাসূল (সা্ঃ) বলেছেন, পাঁচ ওয়াক্ত সালাত/নামাজ আল্লাহ তোমাদের জন্য ফরজ করেছেন্ যে সঠিকভাবে রুকু দিবে এবং পরিপূর্ণরুপে খুশু অবলম্বন করবে তার জন্য আল্লাহ তায়ালা ক্ষমার ওয়াদা করেছেন। আর যে এগুলো করবেনা , তার জন্য কোন ওয়াদা নেই। তবে আল্লাহ চাইলে তাকে ক্ষমাও করতে পারেন, শাস্তিও দিতে পারেন।
(আবু দাউদ, ৪২৫)
তথ্যসূত্রঃ
নামাজের খুশু উন্নয়নের ৩৩ উপায় (সালেহ আল মুনাজ্জিদ), ৯-১৩ পৃষ্ঠা।
0 Comments