কিভাবে আল্লাহ তায়ালার ভালোবাসা পাবেন ?

 

আল্লাহ তায়ালার ভালোবাসা পাওয়ার উপায়


কিভাবে আল্লাহ তায়ালার ভালোবাসা পাবেন ?

মহান আল্লাহর ভালোবাসা কে না পেতে চায়! প্রত্যেক ‍মুসলিমই চায় মহান আল্লাহ তাকে ভালোবাসুক। আর আপনি যদি কোন মুসলিমকে বলেন, আপনি কি আল্লাহকে ভালোবাসেন? সে ব্যক্তি সাথে সাথে উত্তর দিবে, অবশ্যই। এ ব্যাপারে তার মনে কোন দ্বিধাই আসবেনা। কিন্তু মুখে আল্লাহকে ভালোবাসি বললেই কি আর হয়ে যায়? অবশ্যই কর্মের মাধ্যমে তার প্রমাণ দিতে  হয়।

আর আল্লাহর ভালোবাসা পেতে চাইলে কিংবা আল্লাহকে আমি ভালোবাসি, একথা প্রমাণ করতে চাইলে কি করতে হবে তা মহান আল্লাহই আমাদের জানিয়েছেন। 

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

قُلۡ  اِنۡ  کُنۡتُمۡ  تُحِبُّوۡنَ اللّٰہَ  فَاتَّبِعُوۡنِیۡ  یُحۡبِبۡکُمُ اللّٰہُ وَ یَغۡفِرۡ لَکُمۡ ذُنُوۡبَکُمۡ ؕ

- وَاللّٰہُ غَفُوۡرٌ  رَّحِیۡمٌ

“ বল, ‘যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমার (রাসুলের) অনুসরণ কর, আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’। ”

[ সুরা আল ইমরানঃ ৩১]

এখানে আল্লাহ তায়ালা বলেই দিয়েছেন যে, যদি আমরা আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অনুসরণ করি, তবেই আমরা আল্লাহর ভালোবাসা পাব।

আর আমরা এখানে আল্লাহর ভালোবাসা অর্জন করার ১০ টি উপায় বর্ণনা করবো, ইনশাআল্লাহ। যা ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম (র) তার প্রসিদ্ধ গ্রন্থ “ মাদারিজুস সালিকীন” এ উল্লেখ করেছেন। এই ১০ টি উপায় সংকলন করেছেন খালিদ আলে ফুরায়েজ আর নাম দিয়েছেন “আল্লাহর ভালোবাসা অর্জনের দশটি উপায়”। উক্ত গ্রন্থ থেকেই অতি সংক্ষেপে আমরা ১০টি বিষয় উল্লেখ করবো। আর একটা বিষয় জানা জরুরী, এই ১০টি উপায় মূলত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অনুসরণের কয়েকটি দিক। যা আমল করলে অনুসরণে কয়েক ধাপ এগিয়ে যাব।

০১। আল কুরআনের অর্থ বুঝে, উদ্দেশ্য, লক্ষ্য ও প্রতিপাদ্য বিষয় জেনে গভীর মনোনিবেশ সহকারে তেলাওয়াত করা। কেউ কোন বই মুখস্থ করতে চাইলে এর অর্থের দিকে চিন্তা করে আর বইটিকে এভাবে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে যাতে এর রচয়িতার উদ্দেশ্য, লক্ষ্য অনুধাবন করতে সক্ষম হয়। 

                              [ আল্লাহর ভালোবাসা অর্জনের দশটি উপায়ঃ পৃষ্ঠা- ০৫]

০২। ফরজ কাজগুলো আদায়ের সাথে সাথে নফল কার্যাবলীর মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা। কেননা নফল কাজগুলো বান্দাহকে আল্লাহর মহব্বত এর স্তর থেকে আল্লাহর মাহবুব তথা প্রিয়জনের স্তরে পৌছিয়ে দেয়। 

                                       [ আল্লাহর ভালোবাসা অর্জনের দশটি উপায়ঃ পৃষ্ঠা- ০৮] 

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহান রব এর পক্ষ থেকে হাদীসে কুদসীতে বলেন,

“যে ব্যক্তি আমার কোন ওলীর সঙ্গে দুশমনি রাখবে, আমি তার সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করব। আমি যা কিছু আমার বান্দার উপর ফরয করেছি, তা দ্বারা কেউ আমার নৈকট্য লাভ করবে না। আমার বান্দা সর্বদা নফল ‘ইবাদাত দ্বারা আমার নৈকট্য লাভ করতে থাকবে। এমন কি অবশেষে আমি তাকে আমার এমন প্রিয় পাত্র বানিয়ে নেই যে, আমিই তার কান হয়ে যাই, যা দিয়ে সে শুনে। আমিই তার চোখ হয়ে যাই, যা দিয়ে সে দেখে। আর আমিই তার হাত হয়ে যাই, যা দিয়ে সে ধরে। আমিই তার পা হয়ে যাই, যা দ্বারা সে চলে। সে যদি আমার কাছে কিছু চায়, তবে আমি নিশ্চয়ই তাকে তা দান করি। আর যদি সে আমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে, তবে অবশ্যই আমি তাকে আশ্রয় দেই। আমি কোন কাজ করতে চাইলে তা করতে কোন দ্বিধা করি-না, যতটা দ্বিধা করি মু’মিন বান্দার প্রাণ নিতে। সে মৃত্যুকে অপছন্দ করে আর আমি তার বেঁচে থাকাকে অপছন্দ করি।” 

[সহিহ বুখারীঃ ৬৫০২]

০৩। সর্ববস্থায় ও সার্বক্ষণিক জিহ্বা, অন্তর, কাজ এবং অবস্থার মাধ্যমে আল্লাহকে স্মরণ করা। তাই যিকিরের পরিমাণ অনুযায়ী বান্দাহ আল্লাহর ভালোবাসা পাবে।

                                        [ আল্লাহর ভালোবাসা অর্জনের দশটি উপায়ঃ পৃষ্ঠা- ১১]

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ মহান আল্লাহ বলেন, 

“আমার বান্দা যখন আমার যিকির করে এবং আমার যিকিরে তার দু’ ঠোঁট নড়াচড়া করে  তখন আমি তার সঙ্গে থাকি। 

         [সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩৭৯২]

০৪। কুপ্রবৃত্তির অত্যাধিক তাড়নার সময় নিজের প্রবৃত্তির উপর আল্লাহর মহব্বতকে অগ্রাধিকার দেয়া। যদিও আল্লাহর ভালোবাসা লাভ কষ্টসাধ্য ব্যাপার, তা সত্ত্বেও তাঁর ভালোবাসা লাভে উদ্যোগী হওয়া। ইবনুল কাইয়্যিম (র) উক্ত বাক্যের ব্যাখ্যায় বলেন, আল্লাহর সন্তুষ্টিকে আল্লাহ ভিন্ন অন্যের সন্তুষ্টির উপর অগ্রাধিকার দেয়া যদিও এ পথে চলতে বিপদাপদের সম্মুখীন হতে হয় অথবা ভারী কষ্ট স্বীকার করতে হয় অথবা শক্তি সামর্থ্যের অপ্রতুলতা পরিলক্ষিত হয়। 

                                              [ আল্লাহর ভালোবাসা অর্জনের দশটি উপায়ঃ পৃষ্ঠা- ১৩]

শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াহ (র) বলেন, মুসলমানের উচিত সে আল্লাহকে ভয় করবে আর কুপ্রবৃত্তি থেকে নফসকে নিষেধ করবে। শুধুমাত্র প্রবৃত্তি ও লালসার জন্য শাস্তি দেয়া হয় না, বরং প্রবৃত্তির অনুসরণ এবং এর চাহিদার বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেই শাস্তি বর্তায়। তাই কোন নফস, যখন কোন খারাপ ইচ্ছা করে আর ব্যক্তিটি নিজের নফসকে খারাপ থেকে নিষেধ করে তখন এ নিষেধটি আল্লাহর এবাদত ও সওয়াবের কাজে পরিণত হয়।

               [মাজমুউল ফাতওয়াঃ ৬৩৫/১০]

৫। আল্লাহর নামসমূহ ও গুনাবলীকে অন্তকরণ দিয়ে অনুধাবন করা, এ গুলোকে ভালোভাবে অবলোকন করা এবং উত্তমভাবে জানা। আর এ জ্ঞানের বাগানসমূহে অন্তর দিয়ে বিচরণ করা। তাই যে আল্লাহ তায়ালাকে তাঁর নামাবলী, গুনাবলী ও কার্যাবলীসহ জানতে পারে সে অবশ্যই আল্লাহ তায়ালাকে ভালোবাসবে।

                                   [ আল্লাহর ভালোবাসা অর্জনের দশটি উপায়ঃ পৃষ্ঠা- ১৫]

আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ্‌র নিরানব্বই অর্থাৎ এক কম একশ’টি নাম রয়েছে, যে ব্যক্তি তা মনে রাখবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।

[সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২৭৩৬]

০৬। আল্লাহর অবদান অনুদানের প্রতি বিশেষ লক্ষ্য দেয়া। তাঁর অগণিত ও গুপ্ত নেয়ামত ও করুনাকে অবলোকন করা। আর এ ধরণের গভীর মনোনিবেশ বান্দাহকে আল্লাহর মহব্বতের দিকে সাড়া প্রদান করে।

                                   [ আল্লাহর ভালোবাসা অর্জনের দশটি উপায়ঃ পৃষ্ঠা- ১৬]


     وَ اٰتٰىکُمۡ مِّنۡ کُلِّ مَا  سَاَلۡتُمُوۡہُ  ؕ وَ اِنۡ تَعُدُّوۡا  نِعۡمَتَ اللّٰہِ لَا تُحۡصُوۡهَا ؕ اِنَّ  الۡاِنۡسَانَ  لَظَلُوۡمٌ  کَفَّارٌ ـ

আর তোমরা যা চেয়েছ, তার প্রত্যেকটি থেকে তিনি তোমাদের দিয়েছেন এবং যদি তোমরা আল্লাহর নিআমত গণনা কর, তবে তার সংখ্যা নিরূপণ করতে পারবে না। নিশ্চয় মানুষ অধিক অত্যাচারী ও অকৃতজ্ঞ।

[সুরা ইবরাহীমঃ ৩৪]

০৭। এটি অন্য সব উপায় সমূহের  মধ্যে অত্যাধিক গুরুত্বের দাবী রাখে। অন্তরকে পুরোপুরিভাবে আল্লাহর সামনে তুচ্ছ করে দেয়া। তুচ্ছ করা মানে নিজেকে ছোট করে দেয়া, হেয় করে দেয়া ও অবনত করা। 

                 [ আল্লাহর ভালোবাসা অর্জনের দশটি উপায়ঃ পৃষ্ঠা- ১৮]

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

 یَوۡمَئِذٍ یَّتَّبِعُوۡنَ الدَّاعِیَ لَا عِوَجَ لَہٗ ۚ وَ خَشَعَتِ الۡاَصۡوَاتُ  لِلرَّحۡمٰنِ  فَلَا تَسۡمَعُ   اِلَّا هَمۡسًا ـ

সেদিন তারা আহবানকারীর (ফেরেশতার) অনুসরণ করবে। এর কোন এদিক সেদিক হবে না এবং পরম করুণাময়ের সামনে সকল আওয়াজ নিচু হয়ে যাবে। তাই মৃদু আওয়াজ ছাড়া তুমি কিছুই শুনতে পাবে না।

[সুরা ত্বহাঃ ১০৮]

০৮। আল্লাহ তায়ালা যখন (দুনিয়ার আকাশে) আগমন করেন, তখন তাঁর সাথে মোনাজাত ও তাঁর কালাম তেলাওয়াত করার নিমিত্তে তাঁর সাথে একাকিত্ব গ্রহণ করা। অন্তর দিয়ে আল্লাহকে বুঝা এবং তার সামনে বান্দাহ সুলভ আদব নিয়ে আচরণ করা, অতঃপর তওবা ইস্তেগফারের মাধ্যমে এর  ইতিটানা।

                                      [ আল্লাহর ভালোবাসা অর্জনের দশটি উপায়ঃ পৃষ্ঠা- ১৯]

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

 تَتَجَافٰی جُنُوۡبُہُمۡ عَنِ الۡمَضَاجِعِ  یَدۡعُوۡنَ رَبَّہُمۡ   خَوۡفًا وَّ طَمَعًا ۫ وَّ مِمَّا رَزَقۡنٰہُمۡ  یُنۡفِقُوۡنَ ـ

‘তাদের পার্শ্বদেশ বিছানা থেকে আলাদা হয়। তারা ভয় ও আশা নিয়ে তাদের রবকে ডাকে। আর আমি তাদেরকে যে রিয্ক দান করেছি, তা থেকে তারা ব্যয় করে।

[সুরা সেজদাহঃ ১৬]

০৯। সত্যিকারভাবে যারা আল্লাহকে ভালোবাসে তাদের সাহচর্যতা অবলম্বন করা, তাদের ফল সংগ্রহ করা। আর যখন তোমার কথা বলার উপকারিতা প্রাধান্য পাবে আর তুমি জানতে পারবে যে, এ বলার মধ্যে তোমার অবস্থার উন্নতি হাসিল হবে  এবং অন্যকে ফায়দা পৌছাতে পারবে।

                                  [ আল্লাহর ভালোবাসা অর্জনের দশটি উপায়ঃ পৃষ্ঠা- ২০]

১০। ঐ সকল কারণ থেকে দূরে থাকা যে গুলো আল্লাহ ও তাঁর বান্দার অন্তরের মাঝে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে দেয়। তাই অন্তর যখন নষ্ট হয়ে যায় তখন ব্যক্তিটি তার দুনিয়ার কার্যাবলী তে যা ভালো করে তাতে কোন ফায়দা পায় না আর পরকালে তো কোন কল্যাণ অথবা কোন অর্জনের ভাগী হয় না।

                                         [ আল্লাহর ভালোবাসা অর্জনের দশটি উপায়ঃ পৃষ্ঠা- ২১]

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

یَوۡمَ لَا  یَنۡفَعُ  مَالٌ  وَّ  لَا  بَنُوۡنَ ـ

‘যেদিন ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি কোন উপকারে আসবে না’।

[সুরা শুয়ারাঃ ৮৮]


আরও পড়ুন.......

বনী ইসরাঈলের প্রতি ইয়াহইয়া (আঃ) এর ৫টি মূল্যবান উপদেশ







Post a Comment

0 Comments