সালামের সঠিক নিয়ম কি? ছোট বাচ্চা রোযা রাখতে চাইলে করণীয়? আপন ভাইবোন কে যাকাত দেয়া যাবে কি? ড. খন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ) Islam Q/A-54

গুরুত্বপূর্ণ দ্বীনি প্রশ্নোত্তর

প্রশ্ন: আমাদের সমাজে অনেক রকম সালামের প্রচলন আছে। একেকজন একেক রকম উচ্চারণ করে। সালামের উচ্চারণ কোনটা সঠিক?

উত্তর: সালাম মানব সভ্যতায় অত্যন্ত বৈশিষ্ট্যপূর্ণ সম্ভাষণ। প্রত্যেক জাতিই অন্যকে দেখলে সম্ভাষণ করে। মনের মহাব্বত প্রকাশ করে। যেমন: নমস্তে, আদাব, হাইইত্যাদি। এগুলােতে মনের ভালােবাসা ও শ্রদ্ধাবােধ প্রকাশ পায়। আর ইসলাম যেটা দিয়েছে সেটা স্পেশাল দুআও বটে।দ্ধাবােধের পাশাপাশি সবচে' বড় দুআ: তােমার উপর শান্তি হােক, রহমত হােক, বরকত হােক। আমরা যখন সেলামালাইকুম বলি, এতে মনের ভালােবাসা প্রকাশ পেলেও কোনাে দুআ হল না। বরং বদদুআ হতে পারে। কারণ, সেলাম বললে পাথর বােঝায়। তােমার উপর পাথর টাথর কিছু একটা পড়ক। এজন্য আমি অনুরােধ করব, আমরা সুন্দর করে আসসালামু আলাইকুম বলব । যদি কেউ বাঙালি হওয়ার কারণে মাখরাজ না হয়, সমস্যা নেই। কিন্তু শব্দটা সুন্দর করে উচ্চারণ করব। আসসালামু আলাইকুম বলব। তাহলে আমরা ছওয়াব পাব। দুআ হবে। আমাদের পারস্পরিক সম্ভাষণও হবে। আল্লাহ কবুল করুন। আমীন।

প্রশ্ন: আমার ৮ বছরের দুইটা বাচ্চা। গত বছর রোযা রাখছিল। আমি ভেঙে ভেঙে কয়েকটা রাখতে দিয়েছিলাম। কিন্তু এই বার একেবারেই মানে না। রােযা থাকবেই। সাহরির আগ পর্যন্ত ঘুমায়ও না। যদি না ডাকি! সাহরি খেয়ে তারপর ঘুমায়। অনেকে আমাকে বলে, এতটুকু বাচ্চার রোযা রাখাচ্ছি এতে আমার গােনাহ হবে। আসলে এক্ষেত্রে আমার করণীয় কী?

উত্তর: প্রথম কথা আপনার কোনাে গােনাহ হচ্ছে না। তবে ওদের শরীরের কোনাে ক্ষতি না হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। পনেরাে ঘন্টার রােযা, ওদেরকে ছােট থেকেই অভ্যস্ত করাতে হবে। সাত বছর থেকে সালাতে অভ্যস্ত করা এবং রােযাও মাঝে মাঝে থাকলে কোনাে দোষ নেই। তবে ওদের শরীরে কোনাে ক্ষতি না হয়, খেয়াল রাখতে হবে। প্রচুর লিকুইড খাওয়াতে হবে। মাঝে মাঝে রাখবে মাঝে মাঝে ভাঙবে। ওরা যদি জিদ করে রাখে আর শারীরিকভাবে অসুস্থ না হয়, দিনের বেলা ক্লান্ত না হয়, দৌড়াদৌড়ি না করে তাহলে ইনশাআল্লাহ কোনাে অসুবিধা নেই। আপনার কোনাে গােনাহ হচ্ছে না।


প্রশ্ন: আমার থেকে দরিদ্র আপন ভাইবােনকে যাকাত দেয়া যাবে কি না?

উত্তর: আপনার বােন অথবা ভাই আপনার থেকে আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল এটা বড় কথা নয়। বড় কথা হল যাকাতের যােগ্য কি না! যাকাতের যােগ্য বলতে যা আয় করেন তাতে সংসার চলে না, সবসময় অভাব লেগে থাকে, অস্বচ্ছল এবং ব্যাংকে ব্যালেন্স না থাকে তাহলে অবশ্যই তাকে যাকাত দেয় যাবে। বরং ভাইবােন, আপন আত্মীয়স্বজন, রক্তসম্পর্কের আত্মীয়দের আগে যাকাত দেয়া দরকার। তাদেরকে বাদ দিয়ে অন্যদেরকে দিলে বরং যাকাত কবুল না হওয়ার অনেক ভয় দেখিয়েছেন সাহাবি এবং তাবেয়িগণ। তাদের অধিকার বেশি। তবে সন্তান, সন্তানের সন্তান, পিতামাতাএদেরকে যাকাত দেয়া যাবে না । ভাইবােন অন্যান্য আত্মীয়দেরকে দেয়া যাবে।


প্রশ্ন: আমি প্রতিবন্ধী। জামাআতে সালাত আদায় করতে পারি না। আমার জন্য সালাত আদায়ের উত্তম সময় কোনটি?

উত্তর: আল্লাহর ওলি হওয়া, আল্লাহর প্রেম পাওয়া মানুষের জন্য সবচে’ সহজ। কারণ এখানে কোনাে যােগ্যতা লাগে না। কাজেই একজন প্রতিবন্ধী একজন সুস্থ মানুষের চেয়ে অনেক আগে আরাে বেশি আল্লাহর প্রিয় বান্দা হয়ে যেতে পারে। তিনি তার সাধ্যের ভেতরে আল্লাহর ইবাদত করবেন। মসজিদে যাওয়া তার জন্য যদি অসম্ভব হয়, তিনি প্রথম ওয়াক্তে সালাত আদায়ের চেষ্টা করবেন। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন:

أفضل الأعمال الصلاة في أول وقتها

প্রথম ওয়াক্তে সালাত আদায় করা উত্তম (সুনান আবু দাউদ-৪২৬)। তবে কোনাে কোনাে সালাত আদায়ের ক্ষেত্রে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) শেষ সময়ের কথা বলেছেন। যেমন ইশার সালাত। ইশার সালাত যদি সুযােগ থাকে একটু দেরি করে, রাতের এক তৃতীয়াংশ পার হওয়ার পরে, দ্বিতীয়-তৃতীয়াংশের শুরুতে, অর্থাৎ রাত দুঘণ্টা হয়ে গেলে পড়া- এটা তিনি মাঝে মাঝে পড়তেন এবং এটাকে উত্তম বলেছেন। বলেছেন, মানুষের কষ্ট না হলে এটাকে আমি ওয়াক্ত হিসেবে ঠিক করে দিতাম। এটা বাদে বাকি সালাতগুলাে আপনি প্রথম ওয়াক্তে পড়বেন।

54 প্রশ্ন: তাহাজ্জুদ নামায সুন্নাত না কি নফল?

উত্তর: আসলে আমরা অনেক অস্পষ্টতায় ভুগি। মূলত আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে যত বিধান দিয়েছেন তা দুই রকম। একটা হল ফরয। আরেকটা নফল। ফরযের বাইরে যা আছে সবই নফল। সুন্নাত, ওয়াজিব, মুস্তাহাব- সবকিছুই নফলের অন্তর্ভুক্ত। একটা ইবাদত যখন ফরয না হয়, সেটা নফল । নফলের ভেতর যেগুলাে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিয়মিত করতেন এগুলােকে আমরা বলি নফল সুন্নাত। কাজেই তাহাজ্জুদ নফল। ফরয নয় । তবে সুন্নাত নফল । অর্থাৎ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিয়মিত এটা পালন করতেন। কুরআন সুন্নাহর আলােকে সবচে গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত এবং মুআক্কাদ সুন্নাত হল তাহাজ্জুদের সালাত রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কখনাে ছাড়তেন না । ছাড়লে আপত্তি করতেন। এবং কুরআনে বারবার বলা হয়েছে, কিছু হলেও অন্তত কিয়ামুল লাইল বা তাহাজ্জুদ পড়া । এটা নফল কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ নফল ।





Post a Comment

0 Comments