আরবি পড়ার সহজ উপায় ১ম পর্ব
এই পোস্টে আমরা আরবি সহজেই যাতে পড়তে পারি সেই বিষয়ে আলোচনা করবো। মূলত আরবি ব্যাকরণ শিখতে হলে আরবি রিডিং পড়তে পারাটা খুবই জরুরী। সাধারণত মাদ্রাসার ছাত্ররাই আরবি শেখে, তাই তাদের ব্যাকরণ পড়তে অসুবিধা হয় না। কিন্তু আমাদের এই ধারাবাহিক আরবি ব্যাকরণ শিক্ষার পোস্টগুলো যেহেতু স্কুল, কলেজের ছাত্র-ছাত্রীসহ সকলের জন্য, তাই যারা আরবি একেবারেই পড়তে পারেন না, তাদের জন্য এই পোস্ট টি।
শুরুর আগে একটা কথা বলে নেয়া দরকার, আরবি বর্ণমালার উচ্চারণ লিখে বোঝানো সম্ভব নয়। তাই সকল ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে অনুরোধ থাকবে বিশুদ্ধ আরবি শিখতে হলে একজন ক্বারীর সাথে যোগাযোগ করুন । আমরা এই পোস্টের মাধ্যমে শুধু রিডিং পড়তে পারবো, তবে উচ্চারণ শুদ্ধ হবে না। যদিও বিশুদ্ধ উচ্চারণ কুরআন, হাদিস পড়ার জন্য জরুরী। সাধারণ আরবিতে উচ্চারণ ভুল বা মাখরাজ ঠিক না থাকলে কোন সমস্যা নেই। তাই চলুন, আপাতত রিডিং পড়তে শিখি, তাহলে বিশুদ্ধ উচ্চারণ শিখা সহজ হবে।
আরবিতে সর্বমোট বর্ণমালা ২৯ টি। এর মধ্যে স্বরবর্ণের সংখ্যা মাত্র ৩ টি। সুতরাং আরবি দেখে আমরা ভয় পেলেও এটা ইংরেজি, বাংলার চেয়ে অনেক সহজ। এটা মনে রাখা দরকার আরবি সর্বদা ডান দিক থেকে বাম দিকে যায় বা ডান দিক থেকে পড়া শুরু করতে হয়। তো এক নজরে বর্ণমালা গুলো দেখা নেয়া যাক ---
কোন হরফের কি উচ্চারণ মনোযোগ দিয়ে লক্ষ্য করুন।
আমরা ইতিপূর্বেই জেনেছি আরবিতে স্বরবর্ণ ৩টি। আর তা হলো- و ـ ا ـ ي ছবিতে স্টার (*) মার্ক দেয়া আছে ।
আরবিতে মাত্র কয়েকটি চিহৃ দিয়ে উচ্চারণ করা যায়। যদিও সেগুলো ছাড়াও পড়া যায় কিন্তু সেক্ষেত্রে ব্যাকরণগত জ্ঞান প্রয়োজন। তো সেই চিহৃগুলো হলো- যবর ( َ ), যের ( ِ ), পেশ ( ُ ) এই তিনটিকে হরকত বলে। এবং দুই যবর ( ً ), দুই যের ( ٍ ), দুই পেশ ( ٌ ) এই তিনটিকে বলে তানভীন। এছাড়া আছে সাকিন ( ْ ) ও তাশদীদ( ّ )।
ব্যস, এই ৮টি জিনিস জানলে সরল রিডিং পড়তে কোন সমস্যা হবে না। আবার ৮ টি মনে হলেও উচ্চারণ যে একদম ভিন্ন তাও নয়। যেমন- এক যবর দিলে সেটা “আ” কার এর মতো উচ্চারিত হয় আর দুই যের দিলেও “আ” কার এর মতই উচ্চারিত হয় শুধু শেষে একটি “ন” আনতে হয় । উদাহরণ দিলে বিষয়টি স্পষ্ট বুঝা যাবে।
বা ( ب ) তে যবর দিলে হয় “বা যবর ( بَ )” = বা
আর দুই যবর দিলে হয় “ বা দুই যবর ( بً ) ” = বান
শেষে একটি “ন” শুধু যুক্ত হয়েছে আর কিছু না।
» যবর দিয়ে আরবি হরফের উচ্চারণঃ
৮টির মধ্যে একটির উচ্চারণ তো বলেই দিলাম। অর্থ্যাৎ যবর থাকলে “আ” কারের মতো উচ্চারণ হবে। উপরের ছবিতে আমরা আরবি হরফ বা অক্ষরগুলোর উচ্চারণ দেখেছি, এখন সেই অনুসারে শুধু “আ” কার যোগ করে দেয়া। আরো কয়েকটি উদাহরণ আনা যাক---
তা ( ت ) এর উচ্চারণ বাংলা “ত” এর নেয় । এখন “তা( ت )” এর উপর যবর থাকলে হবে “তা যবর( تَ )” = তা
ছা ( ث ) এর উচ্চারণ বাংলা “ছ” এর নেয় । এখন “ছা( ث )” এর উপর যবর থাকলে হবে “ছা যবর( ثَ )” = ছা
জিম ( ج ) এর উচ্চারণ বাংলা “জ” এর নেয় । এখন “জিম( ج )” এর উপর যবর থাকলে হবে “জিম যবর( جَ )” = জা
................. ঠিক এটাই পদ্ধতি।
মনে রাখা জরুরী, যবর ( َ ) সর্বদা হরফ বা অক্ষরের উপরে থাকবে। আর নিচে থাকলে তার নাম হবে যের ( ِ )।
তবে কয়েকটিতে সামান্য ভিন্নতা রয়েছে। নিচের ছবি থেকে যবর দিয়ে হরফের উচ্চারণগুলো ভালোভাবে আয়ত্ব করলে আশা করি আর কোন সমস্যা থাকবে না।
» যের দিয়ে আরবি হরফের উচ্চারণঃ
এবার আসি যের ( ِ ) এর কথায়। যবরের ( َ ) ক্ষেত্রে একটা ছোট রেখা ছিল হরফের বা আরবি অক্ষরের উপরে আর যেরের ( ِ ) ক্ষেত্রে সেই রেখাটিই হবে হরফের নিচে। জাস্ট এতটুকুই পার্থক্য।
সিম্পলভাবে বললে, হরফের উপরে রেখাটি থাকলে যবর() আর নিচে থাকলে যের()। যেরের উচ্চারণটা যে কঠিন তাও না। বাংলা “ই” কারের মতো উচ্চারিত হবে। যেমন-----
তা ( ت ) এর উচ্চারণ বাংলা “ত” এর নেয় । এখন “তা( ت )” এর নিচে যের থাকলে হবে “তা যের( تِ )” = তি
ছা ( ث ) এর উচ্চারণ বাংলা “ছ” এর নেয় । এখন “ছা( ث )” এর নিচে যের থাকলে হবে “ছা যের( ثِ )” = ছি
জিম ( ج ) এর উচ্চারণ বাংলা “জ” এর নেয় । এখন “জিম( ج )” এর নিচে যের থাকলে হবে “জিম যের( جِ )” = জি
---------- একদম সহজ না?
তারপরও সবগুলো হরফ একবার যের() দিয়ে পড়ে নিলে ভালো হয়। নিচের ছবিতে যের দিয়ে আরবি হরফের উচ্চারণ দেয়া হলো---
» পেশ দিয়ে আরবি হরফের উচ্চারণঃ
তিনটি হরকতের শেষটি হলো পেশ()। পেশের উচ্চারণ বাংলা “উ” কারের মতো। উদাহরণ---
তা ( ت ) এর উচ্চারণ বাংলা “ত” এর নেয় । এখন “তা( ت )” এর উপরে পেশ থাকলে হবে “তা পেশ( تُ )” = তু
ছা ( ث ) এর উচ্চারণ বাংলা “ছ” এর নেয় । এখন “ছা( ث )” এর উপরে পেশ থাকলে হবে “ছা পেশ( ثُ )” = ছু
জিম ( ج ) এর উচ্চারণ বাংলা “জ” এর নেয় । এখন “জিম( ج )” এর উপরে পেশ থাকলে হবে “জিম পেশ( جُ )” = জু
--------- একই নিয়ম বাকি হরফগুলোর ক্ষেত্রেও।
নিচের ছবি থেকে সবগুলোর উচ্চারণ ভালোভাবে পড়ে ফেলুন। পেশ দিয়ে হরফগুলোর উচ্চারণ দেয়া আছে।
একটা বিষয় লক্ষণীয়, ওয়া( و ) এবং ইয়া( ي ) এই দুই টার যবর, যের বা পেশ দিয়ে উচ্চারণের ক্ষেত্রে ভিন্নতা আছে। তাই এগুলো বেশি করে চর্চা করুন । আর যেসব হরফে দেখছেন যে, যবর দেয়া স্বত্ত্বেও “আ” কারের উচ্চারণ আসছে না যেমন- গইন( غ ) যবর “গা” না হয়ে গইন( غ ) যবর “গ” হয়েছে এগুলো একটু কষ্ট করে মনে রাখার চেষ্টা করবেন আর যদি সবগুলোতে “আ” কার দিয়ে পড়েন তাতেও কোন সমস্যা নেই। কারণ আমরা তো শুদ্ধ উচ্চারণ শিখছি না। আমরা শিখছি কিভাবে আরবি রিডিং পড়তে পারবো। তাই গইন() যবর “গা” বললেও কোন সমস্যা হবে না। তবে যথা সম্ভব বিশুদ্ধ উচ্চারণ করাটাই উত্তম।
» তানভীন (দুই যবর, দুই যের, দুই পেশ) দিয়ে আরবি হরফের উচ্চারণঃ
দুই যবর, দুই যের ও দুই পেশের উচ্চারণ আলাদাভাবে লিখলাম না। শুধু এতটুকু মনে রাখলেই হবে। যবর দেয়াতে যে উচ্চারণ হয় দুই যবর দিলে শেষে শুধু “ন” যুক্ত হবে। যা আগেই বলা হয়েছে। দুই যের এবং দুই পেশেও একই নিয়ম। শুধু শেষে একটি “ন” যুক্ত করুন, ব্যস হয়ে গেল।
এক পোস্টেই পুরো আলোচনা শেষ করতে চাইলাম, কিন্তু লেখা অনেক বড় হয়ে যাচ্ছে। ২য় পোস্টে বাকি অংশ শেষ করার চেষ্টা করবো, ইনশাআল্লাহ।
তো এই পোস্টে আমরা যা শিখলাম, তা একটু যাচাই করে নেয়া যাক। আমি কয়েকটি হরফ হরকতসহ এবং তানভীনসহ দিচ্ছি আপনারা কমেন্ট করে উত্তর জানাতে পারেন।
যুক্তবর্ণের মতো উচ্চারণ লিখবেন, যদিও যুক্ত বর্ণ সম্পর্কে এখনো কিছু বলা হয় নি। যেমন-
“ دَ خَ لَ = দা খ লা” এভাবে উত্তর লিখবেন, ইনশাআল্লাহ।
১। جَ مِ عُ ?
২। ثِ يَ بً ?
৩। كَ رُ مَ ?
0 Comments