মুনাফিকদের দুইটি রোগ

 মুনাফিকরা দুই ধরনের রোগে আক্রান্ত 

আল্লাহ তায়ালা বলেন -

فِیْ قُلُوْبِھِمْ مَّرَضٌ

“তাদের অন্তরে রোগ রয়েছে” ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন: مرض বা ব্যাধি এর অর্থ হচ্ছে شك বা সংশয়। এরূপ মত পোষণ করেছেন- মুজাহিদ, ইকরিমা, হাসান বসরী, আবুল আলিয়া ও কাতাদাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহিম) । ত্বাওস (রহঃ) বলেন: مرض বা ব্যাধির অর্থ হচ্ছে رياء বা লোক দেখানোর জন্য কাজ করা। 
আবদুর রহমান বিন যায়িদ (রহঃ) বলেন: مرض অর্থ হচ্ছে “দীনের ব্যাপারে তাদের অন্তরের ব্যাধি” শারীরিক ব্যাধি নয়। ইমাম ইবনুল কায়্যিম (রহঃ) বলেন: ব্যাধি দুই প্রকার। উভয় প্রকারের কথা পবিত্র কুরআনে উল্লেখ রয়েছে। 

১. مرض الشكوك والشبهات বা সংশয় ও সন্দেহের ব্যাধি: 

যেমন কুফরী, মুনাফিকী, বিদ‘আতী বিশ্বাস ইত্যাদি এ প্রকার ব্যাধির কোন চিকিৎসা নেই। স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলা যদি এ ব্যাধির আরোগ্য দান না করেন তাহলে তা থেকে মুক্তির কোন উপায় নেই। এখানে এ ব্যাধির কথাই বলা হয়েছে। 
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:  
(فِیْ قُلُوْبِھِمْ مَّرَضٌﺫ فَزَادَھُمُ اللہُ مَرَضًاﺆ وَلَھُمْ عَذَابٌ اَلِیْمٌۭﺃ بِمَا کَانُوْا یَکْذِبُوْنَ)  
“তাদের অন্তরে রোগ রয়েছে, উপরন্তু আল্লাহ তাদের রোগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন এবং তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে যেহেতু তারা মিথ্যা বলতো।”  
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন: 
(فَتَرَی الَّذِیْنَ فِیْ قُلُوْبِھِمْ مَّرَضٌ یُّسَارِعُوْنَ فِیْھِمْ یَقُوْلُوْنَ نَخْشٰٓی اَنْ تُصِیْبَنَا دَا۬ئِرَةٌ)  
“আর আপনি তাদের দেখবেন যাদের অন্তরে ব্যাধি রয়েছে যে, তারা দৌড়ে গিয়ে ওদেরই মধ্যে ঢুকে এ বলে যে, আমরা ভয় করছি আমাদের ওপর না জানি কোন মুসিবত পতিত হয়।”(সূরা মায়িদাহ ৫: ৫২) 
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:  
(اِذْ یَقُوْلُ الْمُنٰفِقُوْنَ وَالَّذِیْنَ فِیْ قُلُوْبِھِمْ مَّرَضٌ غَرَّ ھٰٓؤُلَا۬ئِ دِیْنُھُمْﺚ وَمَنْ یَّتَوَکَّلْ عَلَی اللہِ فَاِنَّ اللہَ عَزِیْزٌ حَکِیْمٌ)  
“স্মরণ কর, মুনাফিক ও যাদের অন্তরে ব্যাধি আছে তারা বলে, ‘এদের দীন এদেরকে বিভ্রান্ত করেছে।’কেউ আল্লাহর ওপর নির্ভর করলে আল্লাহ তো পরাক্রান্ত ও প্রজ্ঞাময়।”(সূরা আনফাল ৮:৪৯)  
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:  
(وَاَمَّا الَّذِیْنَ فِیْ قُلُوْبِھِمْ مَّرَضٌ فَزَادَتْھُمْ رِجْسًا اِلٰی رِجْسِھِمْ وَمَاتُوْا وَھُمْ کٰفِرُوْنَ) 
“এবং যাদের অন্তরে ব্যাধি আছে, এটা তাদের কলুষের সাথে আরও কলুষ যুক্ত করে এবং তাদের মৃত্যু ঘটে কাফির অবস্থায়।”(সূরা তাওবাহ ৯:১২৫) 
এ ব্যাপারে কুরআনুল কারীমে আরোও অসংখ্য আয়াত রয়েছে। যেমন: সূরা মায়িদার ৫২ নং, সূরা আনফালের ৪৯ নং ও সূরা তাওবার ১২৫ নং আয়াত। 

২. مرض الشهوات বা প্রবৃত্তির ব্যাধি: 

যেমন অন্যায়-অশ্লীল, আল্লাহ তা‘আলার নাফরমানী কাজের প্রতি লালসা ইত্যাদি। এ প্রকার ব্যাধি দূরিকরণে যথার্থ ব্যবস্থা গ্রহণ করলে আরোগ্য লাভ করা যায়। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:   
(فَلَا تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَیَطْمَعَ الَّذِیْ فِیْ قَلْبِھ۪ مَرَضٌ وَّقُلْنَ قَوْلًا مَّعْرُوْفًا)  
“কথা বলার সময় এমনভাবে কোমল কন্ঠে কথা বল না যাতে অন্তরে যার (কুপ্রবৃত্তির) রোগ রয়েছে- সে লালায়িত হয়। আর তোমরা ন্যায়সঙ্গত কথা বলবে।”(সূরা আহযাব ৩৩:৩২) (“আত-তিব্বু আন-নব্বী”- লি ইবনিল কায়্যিম)  আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে দু’প্রকার ব্যাধি ও মুনাফিকী থেকে বেঁচে থাকার তাওফীক দান করুন, আমীন। 
আল্লাহ তা‘আলা তাদের পূর্বের পাপের দরুন তাদের পরিণতির জন্য বিভিন্ন অবাধ্য কাজ দিয়ে পরীক্ষা করেন। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন: 
(فَلَمَّا زَاغُوا أَزَاغَ اللّٰهُ قُلُوْبَهُمْ وَاللّٰهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْفَاسِقِيْنَ)  
“অতঃপর তারা যখন বক্রপথ অবলম্বন করলো তখন আল্লাহ তাদের হৃদয়কে বক্র করে দিলেন। আল্লাহ ফাসেক সম্প্রদায়কে হিদায়াত করেন না।”(সূরা সাফ ৬১:৫) অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:  
(وَاَمَّا الَّذِیْنَ فِیْ قُلُوْبِھِمْ مَّرَضٌ فَزَادَتْھُمْ رِجْسًا اِلٰی رِجْسِھِمْ وَمَاتُوْا وَھُمْ کٰفِرُوْنَ)  
“এবং যাদের অন্তরে ব্যাধি আছে, এটা তাদের কলুষের সাথে আরও কলুষ যুক্ত করে এবং তাদের মৃত্যু ঘটে কাফির অবস্থায়।”(সূরা তাওবাহ ৯:১২৫)






Post a Comment

0 Comments