আল কুরআনের আলোকে মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্য

 পবিত্র কুরআনের আলোকে মুনাফিকদের কিছু আলামত ও বৈশিষ্ট্য:



১. مرض القلب বা অন্তরের ব্যাধি:

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(فِیْ قُلُوْبِھِمْ مَّرَضٌﺫ فَزَادَھُمُ اللہُ مَرَضًاﺆ وَلَھُمْ عَذَابٌ اَلِیْمٌۭﺃ بِمَا کَانُوْا یَکْذِبُوْنَ)

“তাদের অন্তরে রোগ রয়েছে, উপরন্তু আল্লাহ তাদের রোগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন এবং তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে যেহেতু তারা মিথ্যা বলতো।”(সূরা বাকারাহ ২:১০)

২. الإفساد في الأرض বা জমিনে ফাসাদ সৃষ্টি করা:

আল্লাহ তা‘আলার বাণী:

وَاِذَا قِیْلَ لَھُمْ لَا تُفْسِدُوْا فِی الْاَرْضِﺫ قَالُوْٓا اِنَّمَا نَحْنُ مُصْلِحُوْنَﭚاَلَآ اِنَّھُمْ ھُمُ الْمُفْسِدُوْنَ وَلٰکِنْ لَّا یَشْعُرُوْنَﭛ

“আর যখন তাদেরকে বলা হয়- তোমরা পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি কর না তখন তারা বলে, আমরা তো শুধু শান্তি স্থাপনকারী। সাবধান! তারাই অশান্তি সৃষ্টিকারী; কিন্তু তারা বুঝে না।”(সূরা বাকারাহ ২:১১-১২)

৩. رميهم المؤمنين بالسفه বা মু’মিনদেরকে নির্বোধ বলে অপবাদ দেয়া:

যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَاِذَا قِیْلَ لَھُمْ اٰمِنُوْا کَمَآ اٰمَنَ النَّاسُ قَالُوْٓا اَنُؤْمِنُ کَمَآ اٰمَنَ السُّفَھَا۬ئُﺚ اَلَآ اِنَّھُمْ ھُمُ السُّفَھَا۬ئُ وَلٰکِنْ لَّا یَعْلَمُوْنَ)

“এবং যখন তাদেরকে বলা হয়, লোকেরা যেরূপ ঈমান এনেছে তোমরাও অনুরূপ ঈমান আন। তখন তারা বলে, নির্বোধেরা যেরূপ ঈমান এনেছে আমরাও কি সেরূপ ঈমান আনব? সাবধান! নিশ্চয়ই তারাই নির্বোধ কিন্তু তারা জানে না।”(সূরা বাকারাহ ২:১৩)

৪. الخداع والرياء والتكاسل عن أداءالعبادات বা প্রতারণা করা, লোক দেখানো ইবাদত করা এবং ইবাদাতে শৈথিল্যতা প্রকাশ করা:

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(يُخَادِعُونَ اللّٰهَ وَالَّذِيْنَ آمَنُوا وَمَا يَخْدَعُونَ إِلَّآ أَنْفُسَهُمْ وَمَا يَشْعُرُونَ)

“তারা আল্লাহ ও মু’মিনদের সাথে প্রতারণা করে। প্রকৃত অর্থে তারা নিজেদের ব্যতীত আর কারও সাথে প্রতারণা করে না; অথচ তারা এটা অনুভব করতে পারে না।”(সূরা বাকারাহ ২:৯)

আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন:

(اِنَّ الْمُنٰفِقِیْنَ یُخٰدِعُوْنَ اللہَ وَھُوَ خَادِعُھُمْﺆ وَاِذَا قَامُوْٓا اِلَی الصَّلٰوةِ قَامُوْا کُسَالٰیﺫ یُرَا۬ءُوْنَ النَّاسَ وَلَا یَذْکُرُوْنَ اللہَ اِلَّا قَلِیْلًاﯝﺬ مُّذَبْذَبِیْنَ بَیْنَ ذٰلِکَﺣ لَآ اِلٰی ھٰٓؤُلَا۬ئِ وَلَآ اِلٰی ھٰٓؤُلَا۬ئِﺚ وَمَنْ یُّضْلِلِ اللہُ فَلَنْ تَجِدَ لَھ۫ سَبِیْلًاﯞ)

“নিশ্চয়ই মুনাফিকরা আল্লাহর সঙ্গে ধোঁকাবাজি করে; বস্তুত তিনি তাদেরকে ধোঁকায় ফেলেন, আর যখন তারা সালাতে দাঁড়ায় তখন শৈথিল্যের সঙ্গে দাঁড়ায়- কেবল লোক দেখানোর জন্য এবং আল্লাহকে তারা অল্পই স্মরণ করে; দোটানায় দোদুল্যমান- না এদের দিকে, না ওদের দিকে! এবং আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন তুমি তার জন্য কখনও কোন পথ পাবে না।”(সূরা নিসা ৪:১৪২-৪৩)

৫. الاستهزاء باللّٰه واياته و رسوله বা আল্লাহ, রাসূল ও দীনের বিষয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা:

আল্লাহ তা‘আলার বাণী: 

(قُلْ أَبِاللّٰهِ وَآيَاتِه۪ وَرَسُولِه۪ كُنْتُمْ تَسْتَهْزِئُونَ)

“বল, তোমরা কি আল্লাহ, তাঁর নিদর্শন ও তাঁর রাসূলকে বিদ্রূপ করছিলে?” (সূরা তাওবাহ ৯:৬৫)

আল্লাহ তা‘আলার বাণী: 

(وَإِذَا لَقُوا الَّذِينَ آمَنُوا قَالُوا آمَنَّا وَإِذَا خَلَوْا إِلٰي شَيَاطِينِهِمْ قَالُوآ إِنَّا مَعَكُمْ إِنَّمَا نَحْنُ مُسْتَهْزِئُونَ)

“এবং যখন তারা মু’মিনদের সাথে মিলিত হয় তখন তারা বলে, আমরা ঈমান এনেছি এবং যখন তারা নিজেদের শয়তানদের সাথে মিলিত হয় তখন বলে, আমরা তোমাদের সঙ্গেই আছি, আমরা তো শুধু ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে থাকি।”(সূরা বাকারাহ ২:১৪)

৬. مؤالاة الكافرين والتربص بالمؤمين বা কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব বজায় রাখা ও মু’মিনদের ক্ষতির প্রতীক্ষা করা:

আল্লাহ তা‘আলার বাণী: “মুনাফিকদেরকে শুভ সংবাদ দাও যে, তাদের জন্য মর্মান্তিুক শাস্তি রয়েছে। মু’মিনগণের পরিবর্তে যারা কাফিরদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে তারা কি তাদের নিকট ইযযত চায়? বরং সমস্ত ইযযত তো আল্লাহরই। কিতাবে তোমাদের প্রতি তিনি তো অবতীর্ণ করেছেন যে, যখন তোমরা শুনবে, আল্লাহর আয়াত প্রত্যাখ্যাত হয়েছে এবং তাকে বিদ্রূপ করা হয়েছে, তখন যে পর্যন্ত তারা অন্য প্রসঙ্গে লিপ্ত না হবে তোমরা তাদের সঙ্গে বসো না; অন্যথায় তোমরাও তাদের মত হবে। মুনাফিক এবং কাফির সকলকেই আল্লাহ তো জাহান্নামে একত্র করবেন। যারা তোমাদের অমঙ্গলের প্রতীক্ষায় থাকে তারা আল্লাহর পক্ষ হতে তোমাদের জয় হলে বলে, ‘আমরা কি তোমাদের সঙ্গে ছিলাম না?’আর যদি কাফিরদের কিছু বিজয় হয়, তবে তারা বলে ‘আমরা কি তোমাদের পরিবেষ্টন করে রেখেছিলাম না এবং আমরা কি তোমাদের মু’মিনদের হাত হতে রক্ষা করিনি?’আল্লাহ কিয়ামাতের দিন তোমাদের মধ্যে বিচার মীমাংসা করবেন এবং আল্লাহ কখনই মু’মিনদের বিরুদ্ধে কাফিরদের জন্য কোন পথ রাখবেন না।”(সূরা নিসা ৪:১৩৮-১৪১)

৭. اللد في الخصومة والعزة بالإثم বা অধিক ঝগড়াটে ও পাপ কাজে সম্মান খুঁজে:

আল্লাহ তা‘আলার বাণী:

(وَمِنَ النَّاسِ مَنْ یُّعْجِبُکَ قَوْلُھ۫ فِی الْحَیٰوةِ الدُّنْیَا وَیُشْھِدُ اللہَ عَلٰی مَا فِیْ قَلْبِھ۪ﺫ وَھُوَ اَلَدُّ الْخِصَامِﰛ وَاِذَا تَوَلّٰی سَعٰی فِی الْاَرْضِ لِیُفْسِدَ فِیْھَا وَیُھْلِکَ الْحَرْثَ وَالنَّسْلَﺚ وَاللہُ لَا یُحِبُّ الْفَسَادَﰜ وَاِذَا قِیْلَ لَھُ اتَّقِ اللہَ اَخَذَتْھُ الْعِزَّةُ بِالْاِثْمِ فَحَسْبُھ۫ جَھَنَّمُﺚ وَلَبِئْسَ الْمِھَادُﰝ)

“আর মানুষের মধ্যে এমন লোকও আছে যার পার্থিব জীবন সংক্রান্ত কথা তোমাকে অবাক করে তোলে। আর সে তার মনের বিষয়ের ওপর আল্লাহকে সাক্ষী বানায়। মূলত সে হচ্ছে ভীষণ ঝগড়াটে ব্যক্তি। আর যখন সে ফিরে যায় তখন সে পৃথিবীতে অশান্তি ছড়াতে এবং শস্য-ক্ষেত্র ও জীবজন্তু বিনাশের চেষ্টা করে। আর আল্লাহ অশান্তি ভালবাসেন না। যখন তাকে বলা হয়, তুমি আল্লাহকে ভয় কর, তখন সম্মানের গরীমা তাকে অনাচারে লিপ্ত করে দেয়। অতএব জাহান্নামই তার জন্য যথেষ্ট, তা কতইনা নিকৃষ্ট বাসস্থান!” (সূরা বাকারাহ ২:২০৪-২০৬)

৮. الإفساد بين المؤمنين বা মু’মিনদের মাঝে ফাসাদ সৃষ্টি করা:

আল্লাহ তা‘আলার বাণী:

(لَوْ خَرَجُوا فِيكُمْ مَا زَادُوكُمْ إِلَّا خَبَالًا وَلَأَوْضَعُوا خِلَالَكُمْ يَبْغُونَكُمُ الْفِتْنَةَ وَفِيكُمْ سَمَّاعُونَ لَهُمْ وَاللّٰهُ عَلِيمٌ بِالظَّالِمِينَ)

“তারা তোমাদের সাথে বের হলে তোমাদের বিভ্রান্তিই বৃদ্ধি করতো এবং তোমাদের মধ্যে ফিত্না সৃষ্টির উদ্দেশ্যে তোমাদের মধ্যে ছুটাছুটি করতো। তোমাদের মধ্যে তাদের জন্য কথা শোনার লোক আছে। আল্লাহ যালিমদের সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত।”(সূরা তাওবাহ ৯:৪৭)

৯. الغدر وعدم الوفاء بالعهد বা বিশ্বাসঘাতকতা ও অঙ্গীকার পূর্ণ না করা:

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَمِنْھُمْ مَّنْ عٰھَدَ اللہَ لَئِنْ اٰتٰٿنَا مِنْ فَضْلِھ۪ لَنَصَّدَّقَنَّ وَلَنَکُوْنَنَّ مِنَ الصّٰلِحِیْنَﮚفَلَمَّآ اٰتٰٿھُمْ مِّنْ فَضْلِھ۪ بَخِلُوْا بِھ۪ وَتَوَلَّوْا وَّھُمْ مُّعْرِضُوْنَﮛفَاَعْقَبَھُمْ نِفَاقًا فِیْ قُلُوْبِھِمْ اِلٰی یَوْمِ یَلْقَوْنَھ۫ بِمَآ اَخْلَفُوا اللہَ مَا وَعَدُوْھُ وَبِمَا کَانُوْا یَکْذِبُوْنَﮜ)

“তাদের মধ্যে কেউ কেউ আল্লাহর নিকট অঙ্গীকার করেছিল, ‘আল্লাহ নিজ কৃপায় আমাদেরকে দান করলে আমরা নিশ্চয়ই সদাকাহ দেবো এবং অবশ্যই সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত হবো।’অতঃপর যখন তিনি নিজ কৃপায় তাদেরকে দান করলেন, তখন তারা এ বিষয়ে কার্পণ্য করলো এবং বিরুদ্ধভাবাপন্ন হয়ে মুখ ফিরালো। পরিণামে তিনি তাদের অন্তরে কপটতা বদ্ধমূল করে দিলেন করলেন আল্লাহর সাথে তাদের সাক্ষাৎ-দিবস পর্যন্ত, কারণ তারা আল্লাহর নিকট যে অঙ্গীকার করেছিল সেটা ভঙ্গ করেছিল এবং তারা ছিল মিথ্যাচারী।”(সূরা তাওবাহ ৯:৭৫-৭৭)

১০. الأمر بالمنكر و النهي عن المعروف বা অসৎ কাজের নির্দেশ ও সৎ কাজে বাধা প্রদান করা:

আল্লাহ তা‘আলা বলেন: 

(اَلْمُنٰفِقُوْنَ وَالْمُنٰفِقٰتُ بَعْضُھُمْ مِّنْۭ بَعْضٍﺭ یَاْمُرُوْنَ بِالْمُنْکَرِ وَیَنْھَوْنَ عَنِ الْمَعْرُوْفِ وَیَقْبِضُوْنَ اَیْدِیَھُمْﺚ نَسُوا اللہَ  فَنَسِیَھُمْﺚ اِنَّ الْمُنٰفِقِیْنَ ھُمُ الْفٰسِقُوْنَ)

“মুনাফিক নর ও মুনাফিক নারী একে অপরের অনুরূপ, তারা অসৎ কর্মের নির্দেশ দেয় এবং সৎ কর্মে নিষেধ করে, তারা হাত বন্ধ করে রাখে, তারা আল্লাহকে বিস্মৃত হয়েছে, ফলে তিনিও তাদেরকে বিস্মৃত হয়েছেন; মুনাফিকেরা তো পাপাচারী।”(সূরা তাওবাহ ৯:৬৭)

১১. التحاكم الي الطاغوت: বা তাগুতের কাছে বিচার ফায়সালা চাওয়া:

আল্লাহ তা‘আলার বাণী:

(اَلَمْ تَرَ اِلَی الَّذِیْنَ یَزْعُمُوْنَ اَنَّھُمْ اٰمَنُوْا بِمَآ اُنْزِلَ اِلَیْکَ وَمَآ اُنْزِلَ مِنْ قَبْلِکَ یُرِیْدُوْنَ اَنْ یَّتَحَاکَمُوْٓا اِلَی الطَّاغُوْتِ وَقَدْ اُمِرُوْٓا اَنْ یَّکْفُرُوْا بِھ۪ﺚ وَیُرِیْدُ الشَّیْطٰنُ اَنْ یُّضِلَّھُمْ ضَلٰلًۭا بَعِیْدًا)

“তুমি কি তাদেরকে দেখনি যারা দাবি করে যে, তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তাতে তারা বিশ্বাস করে, অথচ তারা তাগূতের কাছে বিচারপ্রার্থী হতে চায়, যদিও তা প্রত্যাখ্যান করার জন্য তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং শয়তান তাদেরকে ভীষণভাবে পথভ্রষ্ট করতে চায়।”(সূরা নিসা ৪:৬০)

১২. الصدود عن الله ورسوله বা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পথ হতে মুখ ফিরিয়ে নেয়া:

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَاِذَا قِیْلَ لَھُمْ تَعَالَوْا اِلٰی مَآ اَنْزَلَ اللہُ وَاِلَی الرَّسُوْلِ رَاَیْتَ الْمُنٰفِقِیْنَ یَصُدُّوْنَ عَنْکَ صُدُوْدًاﮌﺆفَکَیْفَ اِذَآ اَصَابَتْھُمْ مُّصِیْبَةٌۭ بِمَا قَدَّمَتْ اَیْدِیْھِمْ ثُمَّ جَا۬ءُوْکَ یَحْلِفُوْنَﺣ بِاللہِ اِنْ اَرَدْنَآ اِلَّآ اِحْسَانًا وَّتَوْفِیْقًا)

“আর যখন তাদেরকে বলা হয়, আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তার দিকে এবং রাসূলের দিকে আস, তখন মুনাফিকদেরকে তুমি তোমার নিকট হতে মুখ একেবারে ফিরিয়ে নিতে দেখবে। তাদের কৃতকর্মের জন্য যখন তাদের কোন মুসীবত হবে তখন তাদের কী অবস্থা হবে। অতঃপর তারা আল্লাহর নামে শপথ করতে করতে তোমার নিকট এসে বলবে, ‘আমরা কল্যাণ এবং সম্প্রীতি ব্যতীত অন্য কিছুই চাইনি।’(সূরা নিসা ৪:৬১-৬২)

১৩. الكذب والخوف وكره المسلمين বা মিথ্যা, ভয় ও মুসলিমদের অপছন্দ করা:

আল্লাহ তা‘আলা বলেন: 

(وَیَحْلِفُوْنَ بِاللہِ اِنَّھُمْ لَمِنْکُمْﺚ وَمَا ھُمْ مِّنْکُمْ وَلٰکِنَّھُمْ قَوْمٌ یَّفْرَقُوْنَﮇلَوْ یَجِدُوْنَ مَلْجَاً اَوْ مَغٰرٰتٍ اَوْ مُدَّخَلًا لَّوَلَّوْا اِلَیْھِ وَھُمْ یَجْمَحُوْنَ)

“তারা আল্লাহর নামে শপথ করে যে, তারা তোমাদেরই অন্তর্ভুক্ত, কিন্তু তারা তোমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়, বস্তুত তারা এমন এক সম্প্রদায় যারা ভয় করে থাকে। তাদের মধ্যে এমন লোক আছে, যে সদাকাহ বণ্টন সম্পর্কে তোমাকে দোষারোপ করে, অতঃপর এটার কিছু তাদেরকে দেয়া হলে তারা পরিতুষ্ট হয়, আর এটার কিছু তাদেরকে না দেয়া হলে তৎক্ষণাৎ তারা বিক্ষুব্ধ হয়।”(সূরা তাওবাহ ৯:৫৬ - ৫৭)

১৪. الإضرار بالمؤمنين বা মু’মিনদের ক্ষতিসাধন করা:

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَالَّذِیْنَ اتَّخَذُوْا مَسْجِدًا ضِرَارًا وَّکُفْرًا وَّتَفْرِیْقًۭا بَیْنَ الْمُؤْمِنِیْنَ وَاِرْصَادًا لِّمَنْ حَارَبَ اللہَ وَرَسُوْلَھ۫ مِنْ قَبْلُﺚ وَلَیَحْلِفُنَّ اِنْ اَرَدْنَآ اِلَّا الْحُسْنٰیﺚ وَاللہُ یَشْھَدُ اِنَّھُمْ لَکٰذِبُوْنَ)

“এবং যারা মাসজিদ নির্মাণ করেছে ক্ষতিসাধন, কুফরী ও মু’মিনদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে এবং ইতোপূর্বে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে যে ব্যক্তি সংগ্রাম করেছে তার গোপন ঘাঁটিস্বরূপ ব্যবহারের উদ্দেশ্যে, তারা অবশ্যই শপথ করবে, ‘আমরা সদুদ্দেশ্যেই সেটা করেছি’; আল্লাহ সাক্ষী, তারা তো মিথ্যাবাদী।”(সূরা তাওবাহ ৯:১০৭)

প্রথম দুই আয়াতে তাদের ঈমানের দাবিকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা হয়েছে যে, তাদের এ দাবিও মূলত প্রতারণামূলক। এটা বাস্তব সত্য যে, আল্লাহ তা‘আলাকে কেউ ধোঁকা দিতে পারে না এবং তারাও হয়তো এ কথা ভাবে না যে, তারা আল্লাহ তা‘আলাকে ধোঁকা দিতে পারবে না, বরং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং মুসলিমদের সাথে ধোঁকাবাজি করার দরুণই বলা হয়েছে যে, তারা আল্লাহ তা‘আলার সাথে ধোঁকাবাজি করছে।

যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَاِنْ یُّرِیْدُوْٓا اَنْ یَّخْدَعُوْکَ فَاِنَّ حَسْبَکَ اللہُﺚ ھُوَ الَّذِیْٓ اَیَّدَکَ بِنَصْرِھ۪ وَبِالْمُؤْمِنِیْنَ)

“যদি তারা তোমাকে প্রতারিত করতে চায় তবে তোমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট, তিনি তোমাকে স্বীয় সাহায্য ও মু’মিনদের দ্বারা শক্তিশালী করেছেন।”(সূরা আনফাল ৮:৬২)

তারা আল্লাহ তা‘আলাকে ধোঁকা দিতে পারবে না, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও মু’মিনদেরকেও নয় বরং তারা ধোঁকা দিতে গিয়ে নিজেরাই ধোঁকায় পতিত হয়। কিন্তু তারা তা উপলব্ধি করতে পারে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(يُخَادِعُونَ اللّٰهَ وَالَّذِينَ آمَنُوا وَمَا يَخْدَعُونَ إِلَّآ أَنْفُسَهُمْ وَمَا يَشْعُرُونَ)

“তারা আল্লাহ ও মু’মিনদের সাথে প্রতারণা করে। প্রকৃত অর্থে তারা নিজেদের ব্যতীত আর কারও সাথে প্রতারণা করে না; অথচ তারা এটা অনুভব করতে পারে না।”(সূরা বাকারাহ ২:৯)

তারা আল্লাহ তা‘আলাকে ধোঁকা দিতে পারে না বরং আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে তাদের ধোঁকায় ফেলেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(اِنَّ الْمُنٰفِقِیْنَ یُخٰدِعُوْنَ اللہَ وَھُوَ خَادِعُھُمْﺆ وَاِذَا قَامُوْٓا اِلَی الصَّلٰوةِ قَامُوْا کُسَالٰیﺫ یُرَا۬ءُوْنَ النَّاسَ وَلَا یَذْکُرُوْنَ اللہَ اِلَّا قَلِیْلًا)

“নিশ্চয়ই মুনাফিকরা আল্লাহর সঙ্গে ধোঁকাবাজি করে; বস্তুত তিনি তাদেরকে ধোঁকায় ফেলেন, আর যখন তারা সালাতে দাঁড়ায় তখন শৈথিল্যের সাথে দাঁড়ায়- কেবল লোক দেখানোর জন্য এবং আল্লাহকে তারা অল্পই স্মরণ করে।”(সূরা নিসা ৪:১৪২)

এজন্যই বলা হয়েছে যে, এসব লোক প্রকৃতপক্ষে আত্ম-প্রবঞ্চনায় লিপ্ত। কেননা আল্লাহ তা‘আলা সমস্ত ধোঁকা ও প্রতারণার ঊর্ধ্বে। অনুরূপ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং মু’মিনগণও ওয়াহীর মাধ্যমে অবগত হয়ে সমস্ত ধোঁকা-প্রতারণা থেকে নিরাপদ ছিলেন।





Post a Comment

0 Comments