দুই প্রকারের মুনাফিক?

 


মুনাফিক দু’প্রকার। যথা:

১. منافق اعتقادي  

বা বিশ্বাসগত মুনাফিক, এরা নিজেদের সম্মান ও জান-মাল রক্ষা করার জন্য অথবা নিজেদের অসৎ উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্য মুখে ইসলামের কথা বলে, প্রকৃতপক্ষে তাদের অন্তর কুফরী দ্বারা পরিপূর্ণ। এরা ইসলামের গণ্ডির বাইরে। এদের ব্যাপারেই আল্লাহ তা‘আলা বলেন: 

(إِنَّ الْمُنَافِقِينَ فِي الدَّرْكِ الْأَسْفَلِ مِنَ النَّارِ)  

“মুনাফিকরা তো জাহান্নামের নিম্নতম স্তরে থাকবে।”(সূরা নিসা ৪:১৪৫) 

এ প্রকার মুনাফিকদের কথাই আল্লাহ তা‘আলা এ সূরার মধ্যে আলোচনা করেছেন। 

২. منافق عملي  

বা আমলগত মুনাফিক। যেমন আবদুল্লাহ ইবনে আমর থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:   

أَرْبَعٌ مَنْ كُنَّ فِيهِ كَانَ مُنَافِقًا خَالِصًا، وَمَنْ كَانَتْ فِيهِ خَصَلَةٌ مِنْهُنَّ كَانَتْ فِيهِ خَصْلَةٌ مِنَ النِّفَاقِ حَتَّي يَدَعَهَا: إِذَا حَدَّثَ كَذِبَ، وَإِذَا عَاهَدَ غَدَرَ، وَإِذَا وَعَدَ أَخْلَفَ، وَإِذَا خَاصَمَ فَجَرَ 

“যার মাঝে চারটি বৈশিষ্ট্য থাকবে সে খাঁটি মুনাফিক এবং যার মাঝে এগুলোর একটি পাওয়া যাবে তার মাঝে সেরূপ মুনাফিকের বৈশিষ্ট্য থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত না তা পরিত্যাগ করে- যখন কথা বলে তখন মিথ্যা কথা বলে, ওয়াদা করলে ভঙ্গ করে, আমানত রাখলে তার খিয়ানত করে, এবং ঝগড়া করলে অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করে।”(সহীহ বুখারী হা: ৩৪) 

কোন মু’মিন ব্যক্তির আমলে বাহ্যিকভাবে এ স্বভাবগুলো পাওয়া গেলে তিনি অপরাধী বলে গণ্য হবেন। ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবেন না। কিন্তু যার অন্তরে এবং আমলে এ স্বভাবগুলো পাওয়া যাবে তিনি প্রকৃতপক্ষে ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবেন। 

আল্লাহ তা‘আলা সূরা বাকারাহসহ অন্যান্য যে সকল সূরাতে মুনাফিকদের ব্যাপারে আলোচনা করেছেন সে সবের মধ্যে রয়েছে 

منافق اعتقادي  

বা বিশ্বাসগত মুনাফিক, যারা ইসলামের গণ্ডির বাইরে। (তাফসীরে সা‘দী পৃ.: ১৯) 

মাদানী সূরাগুলোতে মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করা হয়েছে। কেননা মক্কায় কোন মুনাফিক ছিল না; বরং সেখানে ছিল ঈমানদারদের বিপরীত কাফির ও মুশরিক, তবে কিছু লোক এমন ছিলেন যারা বাহ্যত ও আপাত দৃষ্টিতে কাফিরদের সঙ্গে থাকতেন কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ছিলেন মুসলিম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মক্কা ছেড়ে মদীনায় হিজরত করলেন তখন মদীনাবাসী আউস ও খাযরাজ গোত্রদ্বয় আনসার উপাধি লাভ করেন এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবী হবার সৌভাগ্য লাভ করেন। কিন্তু ইয়াহূদীরা স্বীয় মতবাদে বহাল থাকল। তাদের মধ্যে শুধু আবদুল্লাহ বিন সালাম সত্য ধর্মের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় গ্রহণ করলেন। তখন পর্যন্ত মুনাফিকদের জঘন্যতম দল সৃষ্টি হয়নি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এসব ইয়াহূদী ও আরবের অন্যান্য কতকগুলো গোত্রের সঙ্গে সন্ধিসূত্রে আবদ্ধ ছিলেন। এ দলের সূচনা এভাবে হয় যে, মদীনায় ইয়াহূদীদের তিনটি গোত্র ছিল: ১. বানু কাইনুকা ২. বানু নাযীর এবং ৩. বানু কুরাইযা। 

বনূ কাইনুকা ছিল খাযরাজের মিত্র এবং বাকি দু’টি গোত্র ছিল আউসের মিত্র। যখন বদর যুদ্ধ সংঘটিত হল এবং আল্লাহ তা‘আলা মুসলিমদের জয়যুক্ত করলেন, ইসলামের জয়ডংকা চারিদিকে বেজে উঠল ও তার অপূর্ব দীপ্তি চতুর্দিকে বিকশিত হয়ে উঠল, মুসলিমদের শক্তি প্রতিষ্ঠিত হল ও কাফিরদের গর্ব খর্ব হয়ে গেল, তখনই এ খবীস দলের গোড়া পত্তন হয়। আবদুল্লাহ বিন উবাই বিন সালূল খাযরাজ গোত্রের লোক হলেও আউস ও খাযরাজ উভয় দলের লোকই তাকে খুব সম্মান করত। 

এমনকি আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে বাদশা বলে ঘোষণা দেয়ার পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছিল। এমতাবস্থায় আকস্মিকভাবে এ গোত্রের মন ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হল। ফলে তার বাদশাহ হবার আশায় গুড়েবালি পড়ল। এ দুঃখ-পরিতাপ তো তার অন্তরে ছিলই, এদিকে ইসলামের অপ্রত্যাশিত ক্রমোন্নতি আর ওদিকে যুদ্ধের উপর্যুপরি বিজয় তাকে একেবারে কিংকর্তব্যবিমূঢ় করে দিল। 

এখন সে চিন্তা করল যে, এভাবে কাজ হবে না। সুতরাং সে ঝট করে প্রকাশ্যে ইসলাম গ্রহণ করে নিল এবং অন্তরে কাফির থাকার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল। দলের কিছু লোক তার অধীনে ছিল তাদেরকেও সে এ গোপন পন্থা বাতলে দিল। এভাবে মদীনা ও তার আশেপাশে কপটাচারীদের একটি দল রাতারাতি কায়িম হয়ে গেল। আল্লাহ তা‘আলার ফযলে এ কপটদের মধ্যে মক্কার মুহাজিরদের একজনও ছিলেন না, আর থাকবেই বা কেন? এ সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ তো নিজেদের পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন ও ধনসম্পদ সবকিছু আল্লাহ তা‘আলা রাহে কুরবান করে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে এসেছিলেন।





Post a Comment

0 Comments