সুরাতুল বাকারার গুরুত্বপূর্ণ ফযিলত

 সুরা বাকারার ফযিলত



সূরা বাকারার ফযীলত সম্পর্কে অনেক সহীহ বর্ণনা পাওয়া যায়। ইমাম ইবনুল আরাবী (রহঃ) বলেন: সূরা বাকারাহ এক হাজার সংবাদ, এক হাজার আদেশ ও এক হাজার নিষেধ সম্বলিত একটি সূরা। (তাফসীর ইবনে কাসীর, আহকামুল কুরআন ইবনুল আরাবী, অত্র (সুরা বাকারা/০১) আয়াতের তাফসীর) 

সাহাবী আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:  

لَا تَجْعَلُوا بُيُوتَكُمْ مَقَابِرَ، وَإِنَّ البَيْتَ الَّذِي تُقْرَأُ فِيهِ البَقَرَةُ لَا يَدْخُلُهُ الشَّيْطَانُ 

“তোমরা তোমাদের ঘরগুলোকে কবরে পরিণত কর না। কেননা যে বাড়িতে সূরা বাকারাহ পাঠ করা হয় তাতে শয়তান প্রবেশ করে না।”(তিরমিযী হা: ২৮৭৭, সহীহ) সহীহ মুসলিম এর বর্ণনায় রয়েছে: 

إِنَّ الشَّيْطَانَ يَنْفِرُ مِنَ الْبَيْتِ الَّذِيْ تُقْرَأُ فِيْهِ سُوْرَةُ الْبَقَرَةِ 

“যে বাড়িতে সূরা বাকারাহ পাঠ করা হয় সে বাড়ি থেকে শয়তান পলায়ন করে।”(সহীহ মুসলিম হা: ৫৩৯) 

আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: তোমাদের মধ্যে কাউকে যেন এরূপ না পাই যে, সে এক পায়ের ওপর অন্য পা তুলে পড়তে থাকে, কিন্তু সে সূরা বাকারাহ তেলাওয়াত করে না। জেনে রেখ, যে ঘরে সূরা বাকারাহ তেলাওয়াত করা হয় সে ঘর থেকে শয়তান দ্রুত পালিয়ে যায়। সবচেয়ে খালি ও মূল্যহীন সেই ঘর, যে ঘরে আল্লাহ তা‘আলার কিতাব (কুরআন) পাঠ করা হয় না। (নাসাঈ হা: ৯৬৩, হাদীসটি হাসান) 

উসাইদ বিন হুজাইর (রাঃ) একদা রাতে সূরা বাকারাহ পাঠ আরম্ভ করেন। তাঁর পাশেই বাঁধা ঘোড়াটি হঠাৎ করে লাফাতে শুরু করে। তিনি পাঠ বন্ধ করলে ঘোড়াও লাফানো বন্ধ করে দেয়। আবার তিনি পড়তে শুরু করেন এবং ঘোড়াও লাফাতে শুরু করে। তিনি পুনরায় পড়া বন্ধ করেন, ঘোড়াটিও স্তব্ধ হয়ে যায়। তৃতীয়বারও এরূপ ঘটে। তাঁর শিশু পুত্র ইয়াহইয়া ঘোড়ার পাশে শুয়ে ছিল। কাজেই তিনি ভয় করলেন যে, হয়তো ছেলের গায়ে আঘাত লেগে যাবে। সুতরাং তিনি পড়া বন্ধ করে ছেলেকে উঠিয়ে নেন। অতঃপর তিনি আকাশের দিকে দৃষ্টিপাত করেন যে, ঘোড়ার চমকে ওঠার কারণ কী? সকালে তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে হাযির হয়ে ঘটনাটি বর্ণনা করেন। রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘটনা শুনে বললেন: উসাইদ! তুমি পড়েই যেতে। উসাইদ (রাঃ) বলেন: হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! তৃতীয় বারের পরে প্রিয় পুত্র ইয়াহইয়ার কারণে আমি পড়া সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দিয়েছিলাম। অতঃপর আমি মাথা আকাশের দিকে উঠালে ছায়ার ন্যায় একটি আলোকিত জিনিস দেখতে পাই এবং মুহূর্তেই তা ওপরের দিকে উঠে শূন্যে মিশে যায়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন বললেন: তুমি কি জান সেটা কী ছিল? তাঁরা ছিলেন গগণবিহারী অগণিত জ্যোতির্ময় ফেরেশতা। তোমার (পড়ার) শব্দ শুনে তাঁরা নিকটে এসেছিলেন। যদি তুমি পড়া বন্ধ না করতে তাহলে তাঁরা সকাল পর্যন্ত এরূপ থাকতেন এবং মদীনার সকল লোক তা দেখে চোখ জুড়াতো। একজন ফেরেশতাও তাদের দৃষ্টির অন্তরাল হতেন না। (সহীহ বুখারী হা: ৫০১৮৮, সহীহ মুসলিম হা: ২১৯২) 

সূরা আল-বাকারাহ ও আলি-ইমরানের ফযীলত: আবদুল্লাহ ইবনে বুরাইদাহ (রাঃ) তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন- তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে বসেছিলাম। অতঃপর তাঁকে (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতে শুনলাম তোমরা সূরা বাকারাহ শিক্ষা গ্রহণ কর। কারণ এর শিক্ষা অতি কল্যাণকর এবং এর শিক্ষা বর্জন অতি বেদনাদায়ক। এমনকি বাতিল পন্থীরাও এর ক্ষমতা রাখে না। 

বর্ণনাকারী বলেন: এরপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন- সূরা বাকারাহ ও সূরা আলি-ইমরান শিক্ষা কর। এ দু’টি জ্যোতির্ময় নূরবিশিষ্ট সূরা। এরা এদের তেলাওয়াতকারীর ওপর সামিয়ানা, মেঘমালা অথবা পাখির ঝাঁকের ন্যায় কিয়ামাতের দিন ছায়া দান করবে। (মুসনাদ আহমাদ হা: ৩৪৮-৩৬১, মুসতাদরাকে হাকীম হা: ৫৬০, ইমাম হাকীম বলেন: হাদীসটি সহীহ মুসলিমের শর্তে কিন্তু তিনি বর্ণনা করেননি) 

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: কিয়ামাতের দিন কুরআন তেলাওয়াতকারীদেরকে আহ্বান করা হবে। সূরা বাকারাহ ও সূরা আলি-ইমরান (তেলাওয়াতকারীদের) অগ্রে অগ্রে চলবে মেঘের ছায়া বা পাখির মত। এরা জোরালোভাবে আল্লাহ তা‘আলার কাছে সুপারিশ করবে। (সহীহ মুসলিম হা: ৫৫৩)





Post a Comment

0 Comments