প্রশ্ন: প্রাণীর ছবিযুক্ত পোশাক পরে সালাতের/ নামাজের বিধান
উত্তরঃ অবশ্যই ক্ষতি হবে। শুধু প্রাণীর ছবি নয় যে কোনো পূজ্য বিষয় যেমন পোশাকে বা গায়ে যদি ক্রূশের চিহ্ন থাকে; ক্রূশ কিন্তু কোনো প্রাণীর ছবি নয়, কিন্তু একটা নির্দিষ্ট ধর্মের মানুষ ওটাকে পূজার বিষয় মনে করে। এই ধরণের যে কোনো ছবি, প্রাণীর ছবি শরীরে বা পোশাকে থাকলে সালাত মাকরুহ হবে । অত্যন্ত গোনাহের কাজ হবে। যেটা হাদিস এবং ফিকহে বারবার বলা হয়েছে ।
প্রশ্ন: ফিক্সড ডিপােজিড করলেই কি যাকাত আসবে?
উত্তর: আপনার সম্পদ, নগদ অর্থ অথবা সােনা অথবা ব্যবসার পণ্য আপনার মালিকানায় যেখানেই থাক, যদি নিসাব পরিমাণ হয়, অন্তত পঁয়ত্রিশ-চল্লিশ হাজার টাকার বেশি হয়, তাহলে যাকাত দিতে হবে। কাজেই আপনি যদি ফিক্সড করে ব্যাংকে রাখেন অথবা যে কোনােভাবে ব্যাংকে রাখেন, সেই টাকা নিসাব পরিমাণ হলে যদি এক বছর পূর্ণ হয় অবশ্যই যাকাত দিতে হবে ।
প্রশ্ন: আমার স্বর্ণ আছে কিন্তু যাকাত দেয়ার মতাে টাকা নেই। আমি কী করব?
উত্তর: মনে করি আপনার আট ভরি সােনা আছে। আট ভরি সােনার দাম হয়তাে তিন লক্ষ টাকা। এর যাকাত আসবে ছয় বা সাত হাজার টাকা। তিন লক্ষ টাকার স্বর্ণ আমি ব্যবহার করতে পারি, অথচ এক বছর ধরে আমি ছয় হাজার টাকা আল্লাহর পাওনা দিতে পারব না এটা বাস্তবে মেলে না। আমার একটা সুন্দর বাড়ি আছে, ট্যাক্স হয়েছে বিশ হাজার টাকা। আমি কি বলতে পারব আমার বাড়ি আছে কিন্তু নগদ টাকা নেই, আমি ট্যাক্স দিতে পারব না! সরকার ট্যাক্স নিয়ে ভালাে কাজ করেন। খারাপ কাজও করেন। আর আল্লাহ আপনার সম্পত্তির উপরে চেয়েছেন যে আপনি দরিদ্রদেরকে দেবেন। কোনাে পুরােহিতকে নয়, আল্লাহকেও দেবেন না। দরিদ্রদেরকে দেবেন, সমাজ বিনির্মাণে দেবেন। আল্লাহ তাআলার কাছে ঋণ হিসেবে জমা থাকবে, তিনি ফিরিয়ে দেবেন আখিরাতে। কাজেই এক্ষেত্রে কৃপণতার সুযােগ নেই। আপনাকে যাকাত দিতেই হবে। অর্থ না থাকলে দুটোর একটা হয় সােনা কমিয়ে নিসাবের নিচে নিয়ে আসুন। অথবা মাসে মাসে জমিয়ে হলেও যাকাত পরিশােধ করে দিন।
প্রশ্ন: আমি বাবার সাথে ব্যবসা করি। তবে হাত খরচের জন্য কখনাে কখনাে বাবাকে না বলে কিছু টাকা গ্রহণ করি। এটা আমার জন্য বৈধ কি না?
উত্তর: যদি পুঁজি বাবার হয়, সবকিছু বাবার হয়, তাহলে বাবার অনুমতি লাগবে । প্রশ্ন শুনে আপনার কিছু পুঁজি বাবার কিছু পুঁজি এরকম মনে হল না। বাবার ব্যবসা, আপনি সেখানে কর্ম করেন, এমন মনে হল। এখানে একটি কথা বলে রাখি, আমাদের সমাজে ভাইয়ের দোকানে ভাই কাজ করে, বাবার ব্যবসায় ছেলে কাজ করে কিন্তু কোনাে চুক্তি থাকে না। বেতনের কথা থাকে না। এটা ঠিক নয়। এতে যিনি কাজ করেন তার উপর জুলুম হয়। সন্তান হলেও পিতার দায়িত্ব- তুমি আমার এখানে কাজ করবে, তােমাকে এই পরিমাণ অর্থ বা হাত খরচ দেয়া হবে, এটা বলা । আমরা সন্তানদেরকে কর্মমুখী করব। পরনির্ভরশীল করব না। আর যদি এই ধরণের কোনাে কথা না থাকে তাহলে আপনি বাবাকে না বলে টাকা নিতে পারেন না। বাবাকে বলতে হবে আমি মাঝে মাঝে হাত খরচ নেব।
প্রশ্ন: আমি ব্যাংকে চাকরি করি। কিন্তু বিভিন্ন মানুষ বলে যে ব্যাংকে চাকরি করা সম্পূর্ণ হারাম। সুদের কাজ। আবার অনেকে বলে যে, না, আপনি তাে পারিশ্রমিকের বিনিময়ে টাকা নিচ্ছেন। সুদের টাকার সাথে যুক্ত হওয়ার কারণে আমার ইবাদতবন্দেগী তাে কিছুই কাজে আসবে না। এর থেকে পরিত্রাণের উপায় কী? এটাকে আমি মনেপ্রাণে ঘৃণা করছি বা অন্য জায়গায় যাওয়ার সুযোেগ যদি না থাকে আমার, তাহলে আমি এখন কী করতে পারি?
উত্তর: আল্লাহর রাসূল (সা) বলেছেন, আল্লাহ সুদের লেখক, সুদদাতা, সুদগ্রহীতা, সাক্ষী সবাইকে অভিশাপ দেন। আমরা বিশ্বাস করি, মানবতার বিরুদ্ধে যত অপরাধ আছে, সুদ একটা বড় অপরাধ। এটা নেশা এবং অন্যান্য অপরাধের চেয়েও বড় অপরাধ। যা দরিদ্র এবং ধনীর মধ্যে পার্থক্য বাড়ায়। এবং মানুষকে শােষণ করে। এই পাপে আপনি কোনাে না কোনােভাবে অংশ নিচ্ছেন, এটা কষ্টকর। এবং আপনার ঈমানও এটা বলছে। তবে বিষয় হল বান্দার অবস্থা আল্লাহ জানেন ।
আপনি কতটুকু অসহায়, এটা আল্লাহ জানেন। আপনি আপনার অসহায়ত্ব আল্লাহকে বলবেন। চেষ্টা করবেন, দুআ করবেন, আল্লাহ এখান থেকে বের করে অন্য জায়গায় নেন। আর আপনি যে কথাটা বলেছিলেন, আমার ইবাদত কিছুই কবুল হচ্ছে না; বিষয়টা এরকম। আমরা যে দৈহিক ইবাদত করি এর ফরয আদায় হয়ে যাবে। আর আপনি যে ইনকাম করছেন এর ভেতরে সুদসম্পৃক্ত বিষয়টা হারাম। এই হারাম উপার্জন থেকে আমরা যে দান করি, আর্থিক ইবাদত করি, এটা কবুল হয় না । তবে আমাদের দৈহিক ইবাদত নামায রােযা এগুলাে কবুল হয় । হারাম যিনি ভক্ষণ করেন তার দুআ কবুল হয়। আপনি একটা সমস্যার ভেতরে আছেন- ধর্মীয়ভাবে, মানসিকভাবে। আমরা দুআ করি, আপনিও আল্লাহর কাছে দুআ করেন, অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন, হতাশ হবেন না।
তথ্যসূত্রঃ
জিজ্ঞাসা ও জবাব ১ম খন্ড (ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর)
0 Comments