নামাজে মনোযোগী হওয়ার উপায় -১১
( নামাজে ভিন্ন ভিন্ন সূরা,
আয়াত এবং দরুদ পাঠ করা )
নামাজে/সালাতে ভিন্ন ভিন্ন সূরা, আয়াত এবং দোয়া পড়ার ফলে ইবাদতকারীর মনে হবে যে পঠিত আয়াতে বর্ণিত বিভিন্ন বিষয়ের অর্থের সাথে সে পরিচিত। এভাবে গোটা কুরআনের সাথে তার একটা সংযোগ স্থাপন হবে। মাত্র কয়েকটি সূরা মুখস্থ করে পড়লে একজন নামাযী এই অনুভূতি থেকে বঞ্চিত হয়। রাসূলুল্লাহ (সা) নামাজে কি তেলাওয়াত করতেন, আমরা যদি এটা অনুসন্ধান করি তাহলে এতে বিভিন্নতা বা বৈচিত্রতা দেখতে পাব।
রাসূলুল্লাহ (সা) ফজরের নামাজে যে সমস্ত সূরা পড়তেন তা সংখ্যায় এবং রহমতের দিক থেকে অনেক। রাসূলুল্লাহ (সা) দীর্ঘ মুফাস্সাল সূরা (কুরআনের শেষ সপ্তমভাগে যে সূরা গুলো আছে যেমন- আল ওয়াক্বিয়া(৫৬), আত তুর (৫২) এবং ক্বাফ (৫০) এবং ছোট মুফাস্সাল সূরা যেমন- আত তাকভীর (৮১). যিলযালাহ (৯৯) এবং মুআ’ওয়িযাতাইন (শেষ দুটি সূরা) পড়তেন।
বিভিন্ন বর্ণনায় পাওয়া যায় রাসূলুল্লাহ (সা) ফজরের নামাজে সুরা আর রুম (৩০), ইয়াসিন (৩৬), এবং আস সাফফাত (৩৭) পড়তেন, আর শুক্রবারের ফজরের সালাতে সূরা সাজদাহ (৩২) এবং সূরা আল ইনসান/দাহর (৭৬) পড়তেন।
সালাতুল জোহরে রাসূলুল্লাহ (সা) প্রতি দুই রাকাআতে ৩০ আয়াতের সমান সূরা পড়তেন এবং এগুলো ছিল সূরা আত ত্বরিক (৮৬), আল বুরুজ (৮৫), এবং সূরা আল লাইল (৯২)।
সালাতুল আছরে রাসূলুল্লাহ (সা) প্রতি রাকাতে ১৫ আয়াতের সমান সূরা পড়তেন এবং এই সূরাগুলি ছিল জোহরের নামাজের সূরার সাথে সম্পর্কিত।
সালাতুল মাগরিবে রাসূলুল্লাহ (সা) সুরা ত্বীন (৯৫) এর মত ছোট মুফাস্সাল সুরা তেলাওয়াও করতেন। তিনি এছাড়া সুরা মুহাম্মদ (৪৭), আত তুর (৫২), আল মুরসালাত (৭৭) এবং অন্যান্য সুরাও পাঠ করতেন।
সালাতুল ইশায় রাসূলুল্লাহ (সা) মাঝারি দৈর্ঘ্যের মুফাস্সাল সুরা পড়তেন। যেমন- সুরা আশ শামস (৯১) এবং সুরা আল ইনশিকাক (৮৪)। রাসূলুল্লাহ (সা) মুয়াজ (রা) কে সুরা আ’লা (৮৭), সুরা ক্বলম (৬৮), সুরা আল লাইল (৯২) পড়ার উপদেশ দিতেন।
গভীর রাত্রির নামাজে (কিয়ামুল লাইল) রাসূলুল্লাহ (সা) দীর্ঘ সুরা তেলাওয়াত করতেন। বর্ণিত আছে, তিনি এই নামাজে ২০০ বা ১৫০ আয়াত তেলাওয়াত করতেন, তবে কখনও কখনও আবার তা সংক্ষেপ করতেন।
রুকুতে রাসূলুল্লাহ (সা) এর দোয়া বা স্মরণ ভিন্ন ভিন্ন হতো।
سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيْمِ ـ (অর্থ- গৌরব শুধুমাত্র আমার মহিমান্বিত প্রভুর)
এছাড়াও তিনি পড়তেন-
سُبُّوْحٌ قُدُّوْسٌ رَبُّ الْمَلَاءِكَةِ
وَالرُّوْحِ ـ
(অর্থ- তুমি পরিপূর্ণ, নিখুঁত মহান এবং সমস্ত ফেরেশতা ও আত্মার প্রভু)
এছাড়াও আরও অন্যান্য দোয়া পড়তেন।
রুকু থেকে দাড়ানোর সময় রাসূলুল্লাহ (সা) বলতেন-
سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَه ـ (অর্থ- যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রশংসা করে আল্লাহ তাকে শোনেন )
তিনি বলতেন-
رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْد ـ (অর্থ- হে আমাদের প্রতিপালক, প্রশংসা তো সব তোমারই জন্য )
অথবা বলতেন-
اَللّٰهُمَّ رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْد ـ (অর্থ- হে আল্লাহ! হে আমাদের প্রতিপালক, প্রশংসা তো সব তোমারই জন্য )
কখনও আবার অতিরিক্ত বলতেন-
مِلْءَ السَّمَوَاتِ وَمِلْءَ الْاَرْضِ وَمِلْءَ
مَا شِءْتَ مِنْ شَيْءٍ م بَعْدُ ـ (অর্থ- আসমান, যমীন এবং যা কিছু আছে সব তোমারই প্রশংসায় পরিপূর্ণ )
এছাড়া আরো বিভিন্ন দোয়া পাঠ করতেন।
সিজদাতে রাসূলুল্লাহ (সা)سُبْحَانَ رَبِّيَ الْاَعْلٰى এবং سُبْحَانَ رَبِّيَ الْاَعْلٰى وَبِحَمْدِهٖ ـ
এর অতিরিক্ত বলতেন-
سُبُّوْحٌ قُدُّوْسٌ رَبُّ الْمَلَاءِكَةِ
وَالرُّوْحِ ـ
এছাড়াও আরো ভিন্ন ভিন্ন দোয়া পাঠ করতেন।
দুই সিজদার মাঝখানে বসে রাসূলুল্লাহ (সা) অতিরিক্ত পড়তেন-
رَبِّ اغْفِرْلِىْ رَبِّ اغْفِرْلِىْ ـ (অর্থ- হে আমার প্রভু, আমাকে ক্ষমা কর; হে আমার প্রভু, আমাকে ক্ষমা কর;) তিনি আরও পড়তেন –
اَللّٰهُمَّ اغْفِرْلِىْ وَارْحَمْنِىْ
وَاجْبُرْنِىْ وَارْفَعْنِىْ وَاهْدِنِىْ وَعَافِنِىْ وَارْزُقْنِىْ ـ (অর্থ- হে আল্লাহ; আমাকে ক্ষমা কর, আমাকে দয়া কর, আমাকে শক্তিশালী কর, আমার মর্যাদা বাড়িয়ে দাও, আমাকে পরিচালিত কর, আমাকে সুস্থতা দান কর, আমাকে রিযিক দান কর। )
তাশাহুদের ক্ষেত্রেও একাধিক বর্ণনা আছে। রাসূল (সা) এর উপর দরুদের ব্যাপারে অনেক রকম ভাষ্য পাওয়া যায়। এভাবে একেকজন নামাজী একেক সময় একেকটি পড়তে পারে। ফলে নামাজে একাগ্রতা তৈরি হবে।
তথ্যসূত্রঃ
0 Comments