সাঈদ ইবনে আমের আল জুমাহী (রা্ঃ) এর বিরুদ্ধে ৪ টি অভিযোগ , ঈমানদীপ্ত গল্প-০২

 

ঈমানদীপ্ত গল্প-০২

সাঈদ ইবনে আমের আল জুমাহী (রা্ঃ) এর বিরুদ্ধে ৪ টি অভিযোগ


 
হিমসে
উমর ফারুক (রা্ঃ) এর শুভাগমনে সেখানকার অধিবাসীগণ তাকে বিপুল সম্বর্ধনা জানায়  উমর ফারুক (রা্ঃ) সেখানকার জনগণের কাছে তাদের নতুন গভর্নর সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা স্বভাবসুলভ কারণে  গভর্নরের বিরুদ্ধে এমন চারটি অভিযোগ পেশ করে, যার প্রত্যেকটি অপরটির চেয়ে গুরুতর 
সাঈদ ইবনে আমের আল জুমাহী (রা্ঃ) সম্পর্কে উমর ফারুক (রা্ঃ) খুবই উচ্চ ধারণা পোষণ করতেন কিন্তু এর পরেও তাঁর বিরুদ্ধে উত্থাপিত চারটি গুরুতর অভিযোগ শুনে তিনি হতভম্ব হয়ে পড়লেন

একদিকে জনগণের অর্পিত দায়িত্বের প্রতি নিরপেক্ষতা, অপর দিকে সাঈদ বিন আমের আল জুমাহী (রা্ঃ) এর প্রতি ব্যক্তিগত আস্থা মহব্বত আমীরুল মুমিনীন উমর ফারুক (রা্ঃ) কে বিচলিত করে তুলল পরস্পর বিরোধী উভয়বিধ সংকটের মোকাবেলায় আমীরুল মুমিনীনউমর ফারুক (রা্ঃ) কী ভূমিকা গ্রহণ করলেন, নিম্নে তা তার যবানীতেই প্রদত্ত হলো:

যেহেতু আমি সাঈদ সম্পর্কে খুবই আস্থাশীল, তাই আল্লাহর দরবারে এই বলে প্রার্থনা করি:

হে আল্লাহ ! তুমি সাইদের ব্যাপারে আমার উচ্চধারণাকে বিলীন করে দিও না

অতঃপর আমি গভর্নর এবং হিমসবাসীদের একত্র করে তাদের অভিযোগ সম্পর্কে জিঙ্গাসা করলাম:

গভর্নর সম্পর্কে তোমাদের প্রথম অভিযোগটি কী?’

তারা বলল- তিনি প্রত্যহ তার দফতরে বিলম্বে আসেন

আমি অভিযোগের জওয়াব দানের জন্য গভর্নর সাঈদ (রা্ঃ) কে আহ্বান জানালাম

সাঈদ (রা্ঃ) কিছুক্ষণ নীরব থেকে বললেন-

আমি এর উত্তর দেওয়া পছন্দ করছি না এই জন্যে যে, এটি একান্তভাবেই আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার কিন্তু আপনার নির্দেশের কারণেই আমাকে বাধ্য হয়ে তা বলতে হচ্ছে

এরপর সাঈদ (রা্ঃ) তার অফিসে বিলম্বে আসার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলল-

আমার ঘরে কাজের কোন খাদেম বা চাকরানী নেই তাই আমি প্রত্যহ সকালে পরিবারের সদস্যদের জন্যে প্রথমে রুটির জন্য আটা দিয়ে খামির তৈরি করি, তারপর তা কিছু সময় রেখে দিতে হয় রুটি তৈরির উপযোগী করার জন্যে এরপর রুটি বানিয়ে রেখেই ওযু গোসল করে প্রস্তুত হয়ে দফতরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হই কারণে অফিসে আসতে আমার সামান্য  বিলম্ব ঘটে

অতঃপর আমি জনগণকে উদ্দেশ্য করে বললাম- তোমাদের ২য় অভিযোগ কি?

তারা বলল- আমাদের ২য় অভিযোগ হলো, রাতের বেলা কোন প্রয়োজনে গভর্নরকে ডাকা হলে তিনি আমাদের ডাকে সাড়া দেন না

অভিযোগ শুনে গভর্নর সাঈদ (রা্ঃ) এর উদ্দেশ্যে বললাম- হে সাঈদ, ব্যাপারে তোমার বক্তব্য কি?

সাঈদ (রা্ঃ) বললেন-

এটিও আমার একান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার, যা আমি জনসমক্ষে প্রকাশ করা মোটেই পছন্দ করি না এতদসত্ত্বেও আপনার নির্দেশ পালনার্থে আমাকে বলতে হচ্ছে

এরপর গভর্নর সাঈদ (রা্ঃ) বলতে শুরু করেন-

আমি দিনকে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব জনসাধারণের খিদমতের জন্যে এবং রাতকে আল্লাহর ইবাদতের জন্যে নির্দিষ্ট করে নিয়েছি তাই রাত্রি বেলা তাদের প্রয়োজনে আমি সাড়া দিতে পারি না বলে দুঃখিত

এরপর আমি তাদের নিকট ৩য় অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলাম

তারা বলল- সাঈদ বিন আমের (রা্ঃ) মাসে একদিন তাঁর কার্যালয়ে অনুপস্থিত থাকেন

আমি এই অভিযোগের উত্তর দেওয়ার জন্যে গভর্নর সাঈদের (রা্ঃ) প্রতি আহবান জানালাম

গভর্নর সাঈদ (রা্ঃ) উত্তরে বললেন-

আমীরুল মুমিনীন! আমার ঘরে কোনো কাজের লোক না থাকায় মাসে একবার আমাকে বাজার করতে হয় ছাড়া পরনের এই পোশাক ছাড়া আমার অন্য কোন পোশাক না থাকায় মাসে যেদিন বাজার করি সে দিনই বাজার শেষে পোশাক পরিষ্কার করি এবং তা শুকানো পর্যন্ত আমাকে অপেক্ষা করতে হয় তাই মাসে একদিন কার্যালয়ে অনুপস্থিত থাকা ছাড়া আমার উপায় থাকে না

এবার আমি সাঈদ (রা্ঃ) সম্পর্কে জনগণের কাছে তাদের সর্বশেষ অভিযোগটি সম্পর্কে জানতে চাইলাম তারা বলল- মাঝে মাঝে আমাদের গভর্নর এমনভাবে অজ্ঞান বেহুশ হয়ে পড়েন যেন তাঁর পার্শ্বে উপবিষ্ট লোকদেরও তিনি চিনতে পারেন না

এবারও আমি সাঈদ (রা্ঃ) কে লক্ষ্য করে জিজ্ঞাসা করলাম- কি ব্যাপার সাঈদ! জনগণ তোমার ব্যাপারে এসব কি বলছে?

গভর্নর সাঈদ (রা্ঃ) উত্তরে বললেন-

হে আমীরুল মুমিনীন ! মুশরিক থাকা অবস্থায় আমি মক্কার এক জনসমুদ্রের মাঝে খুবাইব ইবনে আদি (রা্ঃ)-  শাহাদাতের নির্মম দৃশ্য স্বচক্ষে দেখেছি কুরাইশরা জীবিত অবস্থায় তাঁর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তরবারির আঘাতে টুকরো টুকরো করছিল আর বলছিল-

তুমি কি রাজি আছ? যদি তোমাকে ছেড়ে দিয়ে তোমারই উপস্থিতিতে তোমার পরিবর্তে মুহাম্মদকে (সা্ঃ) হত্যা করি?

উত্তরে খুবাইব (রা্ঃ) বলছিলেন-

আল্লাহর শপথ ! মুহাম্মদ (সা্ঃ) কে হত্যার বিনিময়ে আমি মুক্তি পেয়ে আমার পরিবার-পরিজনের নিকট নিরাপদে ফিরে যাওয়া তো দূরের কথা, পথে হেটে যেতে তাঁর পায়ে একটি কাঁটার আচড় লাগুক তাও আমি সহ্য করতে পারব না মুনাফিকী জীবন থেকে শহীদি মৃত্যু আমার কাছে অনেক উত্তম

পুনরায় সাঈদ (রা্ঃ) বললেন-

করুণ দৃশ্যের কথা স্মরণ হলেই আমার মনে প্রশ্ন জাগে, কেন আমি সেদিন খুবাইব (রা্ঃ) কে সাহায্য করিনি? আল্লাহ তাঁর রাসূল (সা্ঃ) আমার এই অপরাধকে ক্ষমা করবেন না এই ভয়ে আমি মাঝে মধ্যে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ি এবং সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলি

গভর্নর সাঈদের উত্তর শুনে আমরা অত্যন্তমুগ্ধ হলাম সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্যে যিনি সাঈদের (রা্ঃ) প্রতি আমার সুধারণাকে আরো একবার সত্যে পরিণত করেছেন

তথ্যসূত্রঃ

সাহাবীদের আলোকিত জীবন ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা/২৫-২৯





Post a Comment

0 Comments