দুনিয়া একটি পরীক্ষা কেন্দ্র

জীবন মানেই পরীক্ষা

জীবন মানেই পরীক্ষা, জীবনের গল্প


অমুসলিমদের চোখে দুঃখ-দুর্দশ হচ্ছে অতিশয় যাতনার ব্যাপার কিন্তু মুসলিমদের জন্য দুনিয়াবি কষ্টগুলো হচ্ছে এক ধরনের পরীক্ষা, আল্লাহর সাথে সম্পর্ক আরও দৃড় করে নেওয়ার এক সুবর্ণ সুযোগ মহামহিম আল্লাহ তাঁর বান্দাদের কখনও স্বচ্ছলতা   স্বাচ্ছন্দ্য দান করে পরীক্ষা করেন

আবার কখনও তাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য বিপদের মধ্যে ফেলেন একজন মুমিন ব্যক্তি যদি বিপদের সময় ধৈর্যধারণ করতে পারেন, তা হলে দয়াময় আল্লাহ তাকে অজস্র পুরস্কার দান করবেন, তার পাপ মোচন করে দেবেন এবং জান্নাতে তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেবেন আল্লাহ তায়ালা বলেন,

وَلَنَبۡلُوَنَّکُمۡ بِشَیۡءٍ مِّنَ الۡخَوۡفِ وَالۡجُوۡعِ وَنَقۡصٍ مِّنَ الۡاَمۡوَالِ وَالۡاَنۡفُسِ وَالثَّمَرٰتِ ؕ  وَبَشِّرِ الصّٰبِرِیۡنَ ۙ 

আমি তোমাদেরকে কিছু ভয়, ক্ষুধা ও ধন-সম্পদ, জীবন ও ফল-ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দিয়ে অবশ্যই পরীক্ষা করব। তুমি শুভ সংবাদ দাও ধৈর্যশীলগণকে-


الَّذِیۡنَ اِذَاۤ اَصَابَتۡہُمۡ مُّصِیۡبَۃٌ ۙ  قَالُوۡۤا اِنَّا لِلّٰہِ وَاِنَّاۤ اِلَیۡہِ رٰجِعُوۡنَ ؕ

যারা তাদের ওপর বিপদ আপতিত হলে বলে, ‘আমরা তো আল্লাহ্ র ই এবং নিশ্চিতভাবে তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তনকারী।’

اُولٰٓئِکَ عَلَیۡہِمۡ صَلَوٰتٌ مِّنۡ رَّبِّہِمۡ وَرَحۡمَۃٌ ۟ وَاُولٰٓئِکَ ہُمُ الۡمُہۡتَدُوۡنَ 


এরাই তারা যাদের প্রতি তাদের প্রতিপালকের নিকট হতে বিশেষ অনুগ্রহ ও রহমত বর্ষিত হয়, আর এরাই সৎপথে পরিচালিত।

(বাকারাহ, ১৫৫-১৫৭)

পক্ষান্তরে অবিশ্বাসীরা তো ব্যাপারে সম্পূর্ণ ক্ষতির মাঝে ডুবে আছে কারণ তারা যে ধৈর্যধারণ করে, তার বিনিময়ে তাদের কোনো প্রতিদান পাওয়ার আশা নেই আল্লাহ তায়ালা বলেন, 

وَلَا تَہِنُوۡا فِی ابۡتِغَآءِ الۡقَوۡمِ ؕ  اِنۡ تَکُوۡنُوۡا تَاۡلَمُوۡنَ فَاِنَّہُمۡ یَاۡلَمُوۡنَ کَمَا تَاۡلَمُوۡنَ ۚ  وَتَرۡجُوۡنَ مِنَ اللّٰہِ مَا لَا یَرۡجُوۡنَ ؕ  وَکَانَ اللّٰہُ عَلِیۡمًا حَکِیۡمًا ٪ 


শত্রু সম্প্রদায়ের সন্ধানে তোমরা হতোদ্যম হয়ো না। যদি তোমরা যন্ত্রণা পাও তবে তারাও তো তোমাদের মতই যন্ত্রণা পায় এবং আল্লাহ্ র নিকট তোমরা যা আশা কর তারা তা আশা করে না। আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।

—আন নিসা - ১০৪

জীবনে আরাম-আয়েশ, সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য এলে একজন মুসলিমের উচিত সবার আগে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা দুনিয়াবি সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য দেখে কারও এমন ভাবা উচিত হবে না যে, তার ধার্মিকতা সদাচারের কারণেই তাকেএত সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য দেওয়া হয়েছে কারণ, দুনিয়াবি বিপদ-আপদই জগতের একমাত্র পরীক্ষা নয় বরং দুনিয়াবি সমৃদ্ধি, সম্পত্তি আর শারীরিক সুস্থতাও তো এক ধরণের পরীক্ষা আল্লাহ তায়ালা বলেন

کُلُّ نَفۡسٍ ذَآئِقَۃُ الۡمَوۡتِ ؕ وَنَبۡلُوۡکُمۡ بِالشَّرِّ وَالۡخَیۡرِ فِتۡنَۃً ؕ وَاِلَیۡنَا تُرۡجَعُوۡنَ 


জীবমাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে; আমি তোমাদেরকে মন্দ ও ভাল দিয়ে বিশেষভাবে পরীক্ষা করে থাকি এবং আমারই নিকট তোমরা প্রত্যানীত হবে।

—আল আম্বিয়া - ৩৫

এর মানে হচ্ছে, আল্লাহ আমাদেরকে কখনও দুরবস্থার মধ্যে ফেলে পরীক্ষা করবেন, আবার কখনও স্বচ্ছলতার মধ্যে রেখে পরীক্ষা করবেন, যাতে তিনি যাচাই করতে পারেন- কারা আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে আর কারা অকৃতজ্ঞ হয়, কারা ধৈর্য ধারণ করে আর কারা অধৈর্য হয়ে পড়ে

আলী ইবনু আবি তালিব (রা্ঃ) বর্ণনা করেন যে, ইবনু আব্বাস (রা্ঃ) বলতেন, আল্লাহ তায়ালা তোমাদের কখনও বিপদে ফেলে পরীক্ষা করবেন আবার কখনও আরাম-আয়েশে রেখে পরীক্ষা করবেন কখনও সুস্বাস্থ্য দান করে পরীক্ষা করবেন আবার কখনও রোগাক্রান্ত করে পরীক্ষা করবেন কখনও সম্পত্তি দ্বারা পরীক্ষা করবেন আবার কখনও দারিদ্রের মধ্যে রেখে পরীক্ষা করবেন কখনও হারাম জিনিস দিয়ে পরীক্ষা করবেন আবার কখনও হালাল জিনিস দিয়ে কখনও আনুগত্যের মাধ্যমে পরীক্ষা করবেন আবার কখনও গুনাহের মাধ্যমে কখনও হিদায়াতের মাধ্যমে পরীক্ষা করবেন আবার কখনও কক্ষচ্যুত করে পরীক্ষা করবেন

ইবনু কাসীর, তাফসিরুল কুরআনীল আযীম

 

তথ্যসূত্রঃ

* বিপদ যখন নিয়ামত (শাইখ মুসা জিবরিল) পৃষ্ঠা, ১৩-১৫





Post a Comment

0 Comments