মুত্তাকী তথা আল্লাহভীরু কারা? তাদের পরিচয়

মুত্তাকী তথা আল্লাহভীরু কারা? তাদের পরিচয়

(المتقين)শব্দটি- মুত্তাকীন   (المتقي)
মুত্তাকী-এর বহুবচন। অর্থ- যারা পরহেয করে চলেন।একজন বান্দা আল্লাহ তা‘আলার ক্রোধ ও শাস্তি থেকে বাচার জন্য তার ও আল্লাহ তা‘আলার ক্রোধ ও শাস্তির মাঝে যে প্রতিবন্ধক নির্ধারণ করে নেয় তাই হল তাকওয়া। সে প্রতিবন্ধক হল- আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্যমূলক কাজ করা এবং তাঁর অবাধ্য কাজ থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে। [১]

হযরত উমর বিন খাত্তাব (রাঃ) হযরত উবাই বিন কাবকে (রাঃ) প্রশ্ন করেনঃ তাকওয়া কি?' তিনি উত্তরে বলেনঃ  কাঁটাযুক্ত দুর্গম পথে চলার আপনার কোন দিন সুযোগ ঘটেছে কি?' তিনি বলেনঃ ‘হ্যাঁ’ তখন হযরত উবাই (রাঃ) বলেনঃ “সেখানে আপনি কি করেন?

হযরত উমর (রাঃ) বলেনঃ ‘কাপড় ও শরীরকে কাঁটা হতে রক্ষা করার জন্য সতর্কতা অবলম্বন করি। তখন হযরত উবাই (রাঃ) বলেনঃ তাকওয়াও ঐ রকমই নিজেকে রক্ষা করার নাম। ইবনুল মুআ'য তাঁর নিম্নের কবিতায় এ অর্থই গ্রহণ করেছেনঃ

‘ছোট ও বড় পাপসমূহ পরিত্যাগ কর, এটাই তাকওয়া। এমনভাবে কাজ কর যেমন বন্ধুর কন্টকাকীর্ণ পথের পথিক যা দেখে সে সম্পর্কে সতর্ক ও সজাগ থাকে। ছোট পাপগুলোকেও হালকা মনে করনা, জেনে রেখো যে, ছোট ছোট নুড়ি পাথর দ্বারাই পর্বত তৈরী হয়ে থাকে। [২]

উমর বিন আবদুল আযীয (রহঃ) বলেন: দিনের বেলা সিয়াম পালন, রাতের বেলা কিয়াম করার নাম তাকওয়া নয়। বরং তাকওয়া হল আল্লাহ তা‘আলা যা হারাম করেছেন তা বর্জন করা এবং যা ফরয করেছেন তা আদায় করা। এরপরেও যাকে ভাল কাজ করার তাওফীক দান করা হয়েছে তা ভালোর ওপর ভাল।

সুতরাং মুত্তাকী হলেন তারা, যারা আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করতঃ জীবনের সর্বক্ষেত্রে তাঁদের আদেশ পালন ও নিষেধ থেকে বিরত থাকেন। [৩]

ইবনে আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, মুত্তাকীন তারাই যারা আল্লাহর উপর বিশ্বাস স্থাপন করতঃ শিরক হতে দূরে থাকেন এবং আল্লাহ তা'আলার নির্দেশাবলী মেনে চলেন। অন্য এক বর্ণনায় আছে যে, মুত্তাকীন তারাই যারা আল্লাহর শাস্তিকে ভয় করতঃ হিদায়াতকে পরিত্যাগ করেন না এবং তাঁর রহমতের আশা রেখে তার তরফ থেকে অবতীর্ণ কিতাবকে বিশ্বাস করে থাকেন।

সুফইয়ান সাওরী (রঃ) ও হযরত হাসান বসরী (রঃ) বলেন, 'মুত্তাকীন তারাই যারা হারাম থেকে বেঁচে থাকেন এবং অবশ্য করণীয় কাজ নত মস্তকে পালন করে থাকেন। হযরত আবু বাকর বিন আইয়াশ (রঃ) বলেন, 'আমাকে হযরত আমাশ (রঃ) প্রশ্ন করেন, মুত্তাকী কারা?' আমি উত্তর দেই। তখন তিনি বলেন, হযরত কালবী (রঃ) কে একটু জিজ্ঞেস করে দেখুন।তিনি বলেন- মুত্তাকীন তাঁরাই যারা কাবীরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকেন। এতে দু'জনেই একমত হন।"

হযরত কাতাদাহ (রঃ) বলেন যে, মুত্তাকীন তাঁরাই যাঁদের সম্পর্কে স্বয়ং আল্লাহ তা'আলা আলোচ্য (সুরা বাক্বারার ২নং) আয়াতের পরে বলেনঃ

الَّذِیۡنَ یُؤۡمِنُوۡنَ بِالۡغَیۡبِ وَ یُقِیۡمُوۡنَ الصَّلٰوۃَ وَ  مِمَّا رَزَقۡنٰہُمۡ  یُنۡفِقُوۡنَ ۙ﴿۳﴾

وَ الَّذِیۡنَ یُؤۡمِنُوۡنَ بِمَاۤ  اُنۡزِلَ اِلَیۡکَ وَ مَاۤ اُنۡزِلَ مِنۡ قَبۡلِکَ ۚ وَ بِالۡاٰخِرَۃِ هُمۡ یُوۡقِنُوۡنَ ؕ﴿۴﴾

অর্থঃ যারা অদৃষ্ট বিষয়গুলিতে বিশ্বাস করে এবং যথা নিয়মে নামায কায়েম রাখে, আর আমি তাদেরকে যে সব রিযিক দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে, আর তোমার প্রতি (হে রাসূল) যা নাযিল করা হয়েছে এবং তোমার পূর্বে যা নাযিল করা হয়েছিল তাতে যারা বিশ্বাস করে এবং আখেরাত সম্বন্ধে যারা দৃঢ় ইয়াকীন রাখে।' (২/সুরা বাক্বারাহ: ৩-৪)

ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) বর্ণনা করেন যে, এসব গুণ মুত্তাকীনের মধ্যে একত্রে জমা হয়। জামে তিরমিযী ও সুনান-ই-ইবনে মাজার হাদীসে আতীয়াহ সা'দী থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ বান্দা প্রকৃত মুত্তাকী হতে পারে না যে পর্যন্ত না সে ঐ সমুদয় জিনিস ছেড়ে দেয় যাতে কোন দোষ নেই এই ভয়ে যে, দোষের মধ্যে যেন না পড়ে।

মুসনাদ-ই-ইবনে আবি হাতিমে আছে, হযরত মু'আয বিন জাবাল (রাঃ) বলেনঃ “কিয়ামতের দিন যখন সমস্ত মানুষকে একটি ময়দানে আটক করা হবে সে সময় একজন আহ্বানকারী ডাক দিয়ে বলবেন, মুত্তাকীন কোথায়? এ ডাক শুনে তারা দাড়িয়ে যাবেন এবং আল্লাহ তাদেরকে তাঁর বাহুতে নিয়ে নেবেন এবং কোন পর্দা ছাড়াই তাদেরকে স্বীয় দর্শন দ্বারা সম্মানিত করবেন।

আবু আফীফ (রঃ) স্বীয় উস্তাদ মুআয (রঃ) কে প্রশ্ন করেনঃ জনাব! মুত্তাকীন কে?' তিনি বলেন, যারা শিরক হতে এবং মুর্তিপূজা হতে বেঁচে থাকেন এবং খাটি অন্তরে তাঁর ইবাদত করেন, তাদেরকেই এরূপ সম্মানের সঙ্গে জান্নাতে পৌছিয়ে দেয়া হবে।' [৪]

তথ্যসূত্রঃ

[১] তাফসিরে ফাতহুল মাজীদ (সুরা বাক্বারাহ/৩-৫)    

[২] তাফসিরে ইবনে কাসির (সুরা বাক্বারাহ/২)

[৩] তাফসিরে ফাতহুল মাজীদ (সুরা বাক্বারাহ/৩-৫)

[৪] তাফসিরে ইবনে কাসির (সুরা বাক্বারাহ/২)

......আরও পড়ুন.....





Post a Comment

0 Comments