ঈমানদীপ্ত গল্প - ০৪
তোফাইল ইবনে আমের (রা) এর আশ্চর্যজনক স্বপ্ন
🔷 মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইন্তেকালের পর আবু বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহুর খিলাফতকালে তিনি ও তাঁর ছেলে আমর সার্বক্ষণিক জিহাদে রত থাকেন। তার শাসনামলে ভণ্ডনবী ও ইসলামত্যাগী মুরতাদদের সাথে মুসলমানদের যুদ্ধ যখন চরমে তখন ভণ্ড নবী মুসায়লামাতুল কাযযাবের সাথে রােমহর্ষক সংঘর্ষে তােফাইল ইবনে আমর আদ দাউসী রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু ও তাঁর ছেলে আমার প্রবল বিক্রমে ঝাঁপিয়ে পড়েন।
যুদ্ধযাত্রার পথে তােফাইল ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু এক আশ্চর্যজনক স্বপ্ন দেখেন। তিনি উপস্থিত সাহাবাদের কাছে এর তাবীর জানতে চেয়ে বলেন :
“আমি এক আশ্চর্য স্বপ্ন দেখেছি।
সাহাবাগণ জানতে চাইলেন :
কী আশ্চর্যজনক স্বপ্ন?”
উত্তরে তিনি বললেন :
“আমি স্বপ্নে দেখেছি, আমার মাথা মুণ্ডন করা হয়েছে এবং আমার মুখের ভিতর থেকে একটি পাখি বেরিয়ে উড়ে গেছে এবং একজন মহিলা আমাকে তার পেটের ভিতর ঢুকিয়ে ফেলেছে এবং আমার ছেলে আমর আমাকে উদ্ধারের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করছে; কিন্তু আমার এবং তার মাঝে এক প্রতিবন্ধকতা আমাকে তার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছে।'
উপস্থিত সাহাবীগণ এই স্বপ্নের বর্ণনা শুনে কিছুক্ষণ নির্বাক থাকলেন, অতঃপর বললেন :
‘আল্লাহ আপনার ভালাে করুন।'
🔷 অতঃপর তিনি নিজেই তাঁর স্বপ্নের তাবীর সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বললেন :
‘আমি নিজেই আমার স্বপ্নের একটি তাবীর সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছি যে, আমার মাথা মুড়ানাে থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, আমি এ জিহাদে শহীদ হয়ে যাব। আর সেই পাখিটি যা আমার মুখের ভিতর দিয়ে বের হয়ে উড়ে গেছে, তা হবে আমার আত্মা, যা তার প্রতিপালকের সান্নিধ্যে আরশে মু'আল্লার দিকে উড্ডীয়মান হবে এবং যে মহিলা আমাকে তার পেটের ভিতরে ঢুকিয়ে ফেলেছে, সেটা হবে সেই যুদ্ধ ক্ষেত্রের কবরস্থান যেখানে আমার লাশ দাফন করা হবে।
আর আমি অবশ্যই আশা করছি যে, এ যুদ্ধে আল্লাহ তাআলা আমাকে শাহাদাত দান করবেন। আমার ছেলে যে আমাকে পাবার জন্যে প্রচেষ্টা চালাচ্ছিল তা হলাে, সেও আমার মতাে শাহাদাতের সৌভাগ্য অর্জনের জন্যে যুদ্ধে প্রাণ বাজি রেখে লড়াই করবে; কিন্তু আল্লাহ রাব্দুল আলামীন তাকে এ যুদ্ধে শাহাদাতের সৌভাগ্য দানের পরিবর্তে অন্য আর একটি জিহাদ পর্যন্ত গাজী হিসেবে তাকে বাঁচিয়ে রাখবেন।
ইয়ামামার প্রান্তরে ‘মুসায়লামাতুল কাযযাবে’র সাথে ইসলামের ইতিহাসের প্রচণ্ডতম রক্তক্ষয়ী এ যুদ্ধে তােফাইল ইবনে আমর আদ দাউসী রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু ঈমানী চেতনা ও শাহাদাতের বাসনায় উদ্বেলিত হয়ে সিংহের ন্যায় খােদাদ্রোহী নাস্তিক ও মুরতাদদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন।
তার তরবারির আঘাতে একের পর এক দুশমনদের দুর্ভেদ্য প্রাচীর যেন ভেঙে খান খান হয়ে যাচ্ছিল। তােফাইল ইবনে আমর আদ দাউসী রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহুকে প্রতিরােধ করার জন্যে চতুর্দিক থেকে তাঁকে ঘিরে ফেলা হলাে। তলােয়ারের সাথে তলােয়ারের ঝংকারে অগ্নিস্ফুলিংগ তাঁর চতুর্পাশ আলােকিত করে তুলছিল। হঠাৎ কোনাে এক শত্রুর আঘাত তােফাইল ইবনে আমর আদ দাউসী রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহুকে ধরায় লুটিয়ে দিল। তিনি কালেমা শাহাদাতের বাণী উচ্চারণ করতে করতে শাহাদাতের পেয়ালা পান করলেন।
রাদিয়াল্লাহু আনহু……….
তথ্যসূত্র: সাহাবিদের আলোকিত জীবন, ১/৪২
0 Comments