স্বগৃহে অবস্থান করলে কি গরু কুরবানীতে ভাগাভাগি চলবে না? সাত (৭) ভাগে বা তার চেয়ে কম ভাগে কুরবানী হবে কি?

প্রশ্ন: গরু কুরবানীতে ভাগাভাগির বিধান কি?

উত্তর: মক্কায় যে নিয়মে কুরবানী দেওয়া হয়, একই নিয়মে স্বগৃহে অবস্থান কালেও কুরবানী দেওয়া যাবে। অর্থাৎ, মক্কায় যেমন একটি গরুতে সাতজন শরীক হতে পারে, তেমনি বাড়িতে বসে কুরবানী দিলেও সাত ব্যক্তি বা পরিবার শরীক হতে পারবে। ইবেন আব্বাস বলেন, “ আমরা এক সফরে ছিলাম। অতঃপর কুরবানী এল। সুতরাং আমরা গাভীতে সাতজন এবং উটে দশজন শরীক হলাম।” (তিরমিযী ৯০৫, ইবনে মাজাহ ৩১৩১ নং)

অনেকে এই হাদীস থেকে মনে করতে পারেন যে, ভাগাভাগির ব্যাপারটা কেবল সফরের। কিন্তু উক্ত হাদীসে ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে, কোন শর্ত বর্ণনা করা হয়নি। তাছাড়া ইবনে আব্বাসের ঐ ঘটনা কোন আম সফরের ছিল না, বরং তা ছিল হজ্জ সফরের, অর্থাৎ মক্কায় কুরবানীর। যেহেতু ইবনে আব্বাস মহানবী (সঃ) এর সাথে কুরবানী সফরে ছিলেন কেবল বিদায়ী হজ্জে। ইতিপূর্বে তিনি নিজ পিতার সঙ্গে মক্কা বিজয় পর্যন্ত বসবাস করেছেন, অতঃপর তিনি কোন যুদ্ধেও নবী (সঃ) এর সঙ্গে বের হন নি। কারণ, তিনি সাবালক ছিলেন না। (মুখতাসার ফাতাওয়া মিসরিয়্যাহ ইবনে তাইমিয়্যাহ ১/৫২১) সুতরাং ঐ হাদীসে সফরের কথা কোন সাধারণ সফর বা মুসাফিরের কথা নয়। ঐ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে হজ্জ সফরে কুরবানীর বিধান। আর ঐ বিধানই গৃহবাসীরও।

ইবেন হাযম বলছেন, “লাইষ সফরে কুরবানীতে ভাগাভাগি বৈধ বলেছেন। অথচ এ নির্দিষ্টকরণের কোন অর্থ হয় না।” (আল-মুহাল্লা ৭/৩৮১)

স্বগৃহে বাস করে সাধারণ কুরবানীতে ভাগাভাগির দলীল দিয়ে আলী (রঃ) অথবা হাসান বিন আলী (রঃ) এর হাদীস উল্লেখ করা যায়। তিনি বলেছেন, “আল্লাহ্‌র রাসুল (সঃ) আমাদেরকে আদেশ করেছেন যে, (কুরবানীর দিনে) আমরা যেন যথাসাধ্য সবচেয়ে ভাল সুগন্ধি ব্যবহার করি, যথাসাধ্য সবচেয়ে মোটাতাজা কুরবানী দিই---গরু সাতজনের পক্ষ থেকে এবং উট দশজনের পক্ষ থেকে। আর আমরা যেন  ‘তকবীর’ সশব্দে বলি এবং প্রশান্তি ও ভদ্রতা বজায় রাখি।”

হাদীসটির  ব্যাপারে হাকেম ও যাহাবী বলেছেন, “বর্ণনাকারী ইসহাক বিন বাযরাজ অজ্ঞাত পরিচয় না হলে হাদীসটিকে ‘সহীহ’ বলে সাব্যস্ত করতাম।”

আল্লামা আলবানী বলেন, “(উক্ত বর্ণনাকারী অজ্ঞাত পরিচয় নয়। যেহেতু) আযদী তার পরিচয় দিয়ে তাকে ‘দুর্বল’ বলেছেন এবং ইবনে হিব্বান তাকে ‘সিক্বাতুত তাবেঈন’ (১/২৪) এ উল্লেখ করেছেন।” (তামামুল নিন্নাহ ৩৪৬ পৃঃ)


--- আবদুল হামীদ ফাইযী আল মাদানি ---


প্রশ্ন: অনেকে বলেন, ‘সাত ভাগে কুরবানী দিতে হলে সাতজন লোকই হতে হবে, নচেৎ গোটা দিতে হবে। তাতে ২, ৩, ৪, ৫ এবং ৬ ভাগে ভাগাভাগি চলবে না।’ এ কথা কি ঠিক?

উত্তর: কুরবানী ঘরে থাকা অবস্থায় দিলেও একটি গরু কুরবানীতে সাত ব্যক্তি অংশ নিতে পারবে, অনুরূপ সফরে বা হজ্জে থাকলেও ভাগাভাগি করা চলবে। অবশ্য এক সপ্তমাংশ ভাগ থেকে কম দেওয়া চলবে না। তবে এক সপ্তমাংশ ভাগের বেশি দিতে হবে। 

যেমন একটি গরুতে দুই, তিন, চার, পাঁচ বা ছয় জনও সমানভাবে অথবা কমবেশি ভাগ নিয়ে অংশ গ্রহণ করতে পারে। তবে কারো ভাগ যেন এক সপ্তমাংশ থেকে কম না হয়। সুতরাং কেউ অর্ধেক, কেউ এক তৃতীয়াংশ ও কেউ এক ষষ্ঠাংশ ভাগ কুরবানী ভাগ দিতে পারে।

একটি গরুতে যদি সাতজনকে শরীক হওয়া বৈধ হয়, তাহলে তার থেকে আরও কম জনের শরীক হওয়া অধিকরূপে বৈধ হবে। আর যেটুকু বেশি দেবে, সেটুকু তাদের তরফ থেকে নফল হবে। যেমন যার একটি ছাগল দিলে চলত, সে যদি একটি গরু অথবা উট দেয়, তাহলে তার তরফ থেকে তা নফল গণ্য হবে।

ইমাম শাফেয়ী (রঃ) বলেছেন, “শরীকরা যদি সাতজন অপেক্ষা কম হয়, তাহলেও তা যথেষ্ট। অতিরিক্ত ভাগ দিয়ে তারা নফল করে। যেমন যাকে ছাগল দিতে হবে, সে যদি উট দেয়, তাহলে তাও যথেষ্ট হবে। আর ছাগল থেকে যা বেশি, তা হবে নফল।” (কিতাবুল উম্ম ২/২৪৪)

কাসানী বলেন, “এতে কোন সন্দেহ নেই যে, গরু কিংবা উট সাতজনের কম ব্যক্তির তরফ থেকেও কুরবানী বৈধ। যেমন একটি গরু বা উটে ২, ৩, ৪, ৫ বা ৬ জন শরিক হতে পারে। যেহেতু যখন সাত ভাগের এক ভাগ কুরবানী বৈধ, তখন তার বেশি অধিকরূপে বৈধ। চাহে তাদের সকলের অংশ একই রকম হোক অথবা ভিন্ন রকম। যেমন কারো অর্ধেক, কারো তিন ভাগের এক ভাগ এবং কারো ছয় ভাগের এক ভাগ; অবশ্য সাত ভাগের এক ভাগ থেকে কম যেন কারো না হয়।”  (বাদাইয়ুস স্বানায়ি ৫/১৭)

 প্রশ্ন: হাদির (কুরবানির পশু) গলায় মালা পড়ানো যাবে কি না?

উত্তর: কুরবানীর পশুকে আলাদা বুঝাতে চিহ্ন স্বরূপ হার, মালা ইত্যাদি পরানো যাবে। কিন্তু অতিরিক্ত খরচ করে অপচয় না করা। কারণ হাদিসে এসেছে,

قَالَتْ عَائِشَةُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا أَنَا فَتَلْتُ قَلاَئِدَ هَدْيِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِيَدَيَّ، ثُمَّ قَلَّدَهَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِيَدَيْهِ، ثُمَّ بَعَثَ بِهَا مَعَ أَبِي‎

অর্থ: হযরত আয়িশা রা: বলেন,আমি নিজ হাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কুরবানীর জন্তুর জন্য হার পাকিয়েছি। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ হাতে তাকে হার পরিয়ে (আমার পিতা) আবূ বকর (রাঃ) এর সঙ্গে পাঠিয়েছেন।

(সহিহ বুখারী হাদীস: ২৩১৭, মুসলিম-১৩২১) 






Post a Comment

0 Comments