ইসলামিক গল্প (বিস্ময়কর বালক, জাদুকর ও সাধকের গল্প) - ২

আসহাবুল উখদুদ (একটি ঈমানদীপ্ত ইসলামিক গল্প)

Read in  English


ইসলামিক গল্প (বিস্ময়কর বালক, জাদুকর ও সাধকের গল্প), হাদিসের গল্প, কুরআনের গল্প, শিক্ষণীয় গল্প

১ম অংশে পড়তে  ক্লিক করুন   

মন্ত্রী উত্তরে বললেনঃ আমার প্রভু। বাদশাহ বললোঃ হ্যা, অর্থাৎ আমি। মন্ত্রী বললেনঃ আপনি কেন হবেন? বরং আমার এবং আপনার প্রভু লা শারীক আল্লাহ রাব্বল আলামীন আমার চোখের দৃষ্টি শক্তি ফিরিয়ে দিয়েছেন। তাঁর এ কথা শুনে বাদশাহ বললোঃ তাহলে আমি ছাড়াও আপনার কোন প্রভু আছে না কি?” 

মন্ত্রী জবাব দিলেনঃ হ্যা অবশ্যই। তিনি আমার এবং আপনার উভয়েরই প্রভু ও প্রতিপালক। বাদশাহ তখন মন্ত্রীকে নানা প্রকার উৎপীড়ন এবং শাস্তি দিতে শুরু করলো এবং জিজ্ঞেস করলোঃ এ শিক্ষা আপনাকে কে দিয়েছে? মন্ত্রী তখন ঐ বালকের কথা বলে ফেললেন এবং জানালেন যে, তিনি তার কাছে ইসলাম গ্রহণ করেছেন। 

বাদশাহ তখন বালকটিকে ডেকে পাঠিয়ে বললোঃ তুমি তো দেখছি যাদুবিদ্যায় খুবই পারদর্শিতা অর্জন করেছে যে, অন্ধদের দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিচ্ছ এবং দুরারোগ্য ব্রোগীদের আরোগ্য দান করছো? বালক উত্তরে বললোঃ এটা ভুল কথা। আমি কাউকেও সুস্থ করতে পারি না, যাদুও পারে না। সুস্থতা দান একমাত্র আল্লাহই করে থাকেন। 

বাদশাহ বললোঃ অর্থাৎ আমি। কারণ সবকিছুই তো আমিই করে থাকি। বালক বললোঃ না, না, এটা কখনই নয়। বাদশাহ বললোঃ তাহলে কি তুমি আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে প্রভু বলে স্বীকার কর? বালক উত্তরে বললোঃ হ্যা, আমার এবং আপনার প্রভু আল্লাহ ছাড়া কেউ নয়। বাদশাহ তখন বালককে নানা প্রকার শাস্তি দিতে শুরু করলো। বালকটি অতিষ্ঠ হয়ে শেষ পর্যন্ত সাধক সাহেবের নাম বলে দিলো।

বাদশাহ সাধককে বললোঃ তুমি এ ধর্মত্যাগ কর। সাধক অস্বীকার করলেন। তখন বাদশাহ তাঁকে করাত দ্বারা ফেড়ে দু'টুকরা করে দিলো। এরপর বাদশাহ বালকটিকে বললোঃ তুমি সাধকের প্রদর্শিত ধর্মবিশ্বাস পরিত্যাগ কর। বালক অস্বীকৃতি জানালো। 

বাদশাহ তখন তার কয়েকজন সৈন্যকে নির্দেশ দিলোঃ এ বালককে তোমরা অমুক পাহাড়ের চূড়ার উপর নিয়ে যাও। অতঃপর তাকে সাধকের প্রদর্শিত ধর্ম বিশ্বাস ছেড়ে দিতে বললো। যদি মেনে নেয় তবে তো ভাল কথা। অন্যথায় তাকে সেখান হতে গড়িয়ে নীচে ফেলে দাও। সৈন্যরা বাদশাহর নির্দেশমত বালকটিকে পর্বত চূড়ায় নিয়ে গেল এবং তাকে তার ধর্ম ত্যাগ করতে বললো। বালক অস্বীকার করলে তারা তাকে ঐ পর্বত চূড়া হতে ফেলে দিতে উদ্যত হলো। 

তখন বালক আল্লাহ তা'আলার নিকট প্রার্থনা। করলোঃ হে আল্লাহ! যেভাবেই হোক আপনি আমাকে রক্ষা করুণ! এ প্রার্থনার সাথে সাথেই পাহাড় কেঁপে উঠলো এবং ঐ সৈন্য গুলো গড়িয়ে নীচে পড়ে গেল। বালকটিকে আল্লাহ রক্ষা করলেন সে তখন আনন্দিত চিত্তে ঐ যালিম বাদশাহর নিকট পৌছলো বাদশাহ বিস্মিতভাবে তাকে জিজ্ঞেস করলোঃ ব্যাপার কি? আমার সৈন্যরা কোথায়? বালকটি জবাবে বললোঃ আমার আল্লাহ আমাকে তাদের হাত হতে রক্ষা করেছেন এবং তাদেরকে ধ্বংস করেছেন। 

বাদশাহ তখন অন্য কয়েকজন সৈন্যকে ডেকে বললোঃ নৌকায় বসিয়ে তাকে সমুদ্রে নিয়ে যাও, তারপর তাকে সমুদ্রগর্ভে নিক্ষেপ করে এসো। সৈন্যরা বালককে নিয়ে চললো এবং সমুদ্রের মাঝখানে নিয়ে গিয়ে নৌকা হতে ফেলে দিতে উদ্যত হলো। বালক সেখানেও মহান আল্লাহর নিকট ঐ একই প্রার্থনা জানালো। সাথে সাথে সমুদ্রে ভীষণ ঢেউ উঠলো এবং সমস্ত নৈস্য সমুদ্রে নিমজ্জিত হলো। বালক নিরাপদে তীরে উঠলো। এবং বাদশাহর দরবারে হাজির হয়ে বললোঃ আমার আল্লাহ আমাকে আপনার সেনাবাহিনীর কবল হতে রক্ষা করেছেন। হে বাদশাহ! আপনি যতই বুদ্ধি খাটান না কেন, আমাকে হত্যা করতে পারবেন না। তবে হ্যা আমি যে পদ্ধতি বলি সেভাবে চেষ্টা করলে আমার প্রাণ বেরিয়ে যাবে। 

বাদশাহ বললোঃ কি করতে হবে? বালক উত্তরে বললোঃ সকল মানুষকে একটি ময়দানে সমবেত করুন। তারপর খেজুর কাণ্ডের মাথায় শূল উঠিয়ে দিন। অতঃপর আমার তুণ হতে একটি তীর বের করে আমার প্রতি সেই তীর নিক্ষেপ করার সময় নিম্নের বাক্যটি পাঠ করুনঃ “আল্লার নামে (এই তীর নিক্ষেপ করছি), যিনি এই বালকের প্রতিপালক।” তাহলে সেই তীর আমার দেহে বিদ্ধ হবে এবং আমি মারা যাবো।

বাদশাহ তাই করলো। তীর বালকের কানপট্টিতে বিদ্ধ হলো এবং সেখানে হাত চাপা দিলো ও শাহাদাত বরণ করলো। সে শহীদ হওয়ার সাথে সমবেত জনতা ধর্মকে সত্য বলে বিশ্বাস করলো। সবাই সমবেত কণ্ঠেধ্বণি তুললোঃ আমরা এই বালকের প্রতিপালকের উপর ঈমান আনলাম। এ অবস্থা দেখে বাদশাহ সভাষদবর্গ ভীত সনত্রস্ত হয়ে পড়লো এবং বাদশাহকে বললোঃ আমরা তো এই বালকের ব্যাপারটা কিছুই বুঝতে পারলাম না, সব মানুষই তার ধর্মে বিশ্বাস স্থাপন করলো! আমরা তার ধর্মের প্রসার লাভের আশংকায় তাকে হত্যা করলাম, অথচ হিতে বিপরীত ঘটলো। আমরা যা আশংকা করছিলাম তাই ঘটে গেল। সবাই যে মুসলমান হয়ে গেল! এখন কি করা যায়?

বাদশাহ তখন তার অনুচরবর্গকে নির্দেশ দিলোঃ সকল মহল্লায় ও রাস্তায় রাস্তায় বড় বড় খন্দক খনন করো এবং ওগুলোতে জ্বালানিকাষ্ঠ ভর্তি করে দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দাও। যারা ধর্ম ত্যাগ করবে তাদেরকে বাদ দিয়ে এই ধর্মে বিশ্বাসী সকলকে এই অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করো। বাদশাহর এ আদেশ যথাযথভাবে পালিত হলো। মুসলমানদের সবাই অসীম ধৈর্য্যের পরিচয় দিলেন এবং আল্লাহর নাম নিয়ে আগুনে ঝাপিয়ে পড়তে লাগলেন।

একজন নারী কোলে শিশু নিয়ে একটি খন্দকের প্রতি ঝুঁকে তাকিয়ে দেখছিলেন। হঠাৎ ঐ অবলা শিশুর মুখে ভাষা ফুটে উঠলো। সে বললোঃ মা! কি করছেন? আপনি সত্যের উপর রয়েছেন। সুতরাং ধৈর্যের সাথে নিশ্চিন্তে অগ্নিকুণ্ডে ঝাপিয়ে পড়ুন। 

(এ হাদীসটি মুসনাদে আহমদে বর্ণিত হয়েছে। সহীহ মুসলিমের শেষ দিকেও এ হাদীসটি বর্ণিত আছে। সুনানে নাসাঈতেও কিছুটা সংক্ষেপে এ হাদীস বর্ণনা করা হয়েছে)






Post a Comment

0 Comments