আল্লাহ এক এবং অদ্বিতীয় । এক আল্লাহ ছাড়া একাধিক উপাস্য নির্ধারণ করা তাওহিদী আকিদার পরিপন্থী এবং শির্ক। ইসলামে বহু ঈশ্বরবাদ অযৌক্তিক এবং একান্ত পরিত্যাজ্য বা অগ্রহণীয় বিষয় হিসাবে বিবেচিত। মহান আল্লাহ তা’আলা
নিজেই
শির্কের অসারতা প্রমাণ করেছেন,
আল্লাহ তা’আলা বলেন,
لَوْ كَانَ فِيْهِمَا اٰلِهَةٌ اِلَّا اللهُ
لَفَسَدَتَا
فَسُبْحٰنَ اللهِ رَبِّ الْعَرْشِ
عَمَّا يَصِفُوْنَ ـ
“যদি আল্লাহ ছাড়া আসমানে ও যমীনে বহু ইলাহ্ থাকত, তবে উভয়ই ধ্বংস হয়ে
যেত। অতএব, তারা যা বলে তা হতে আরশের অধিপতি আল্লাহ পবিত্র,
মহান।” (সুরা আম্বিয়া- ২২)
ইসলামে শিরক একটি জঘন্য এবং অমার্জনীয়
অপরাধ। অবশ্যই বিচার দিবসে আল্লাহ শিরকের অপরাধ ক্ষমা করবেন না। পবিত্র
কুরআনে আল্লাহ তা’আলা ঘোষণা করেছেন,
اِنَّ اللهَ لَا يَغْفِرُ اَنْ يُّشْرَكَ بِهٖ
وَيَغْفِرُ مَا دُوْنَ ذٰلِكَ لِمَنْ يَّشَاءُ
وَمَنْ يُّشْرِكْ بِاللهِ
فَقَدِ افْتَرٰى اِثْمًا عَظِيْمًا ـ
“নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর সাথে শরীক করা ক্ষমা করেন
না । ইহা ব্যতীত অন্যান্য অপরাধ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন এবং যে কেউ
আল্লাহর সাথে শরীক করে সে এক মহাপাপ করে।” (সুরা নিসা-
৪৮)
মানুষের মাধ্যমে যত ধরণের গুনাহের
কাজ হতে পারে এ সবের মধ্যে শিরকে আকবর হচ্ছে সবচেয়ে বড় গুনাহ । বড় শিরক
নিখিল বিশ্বের প্রতিপালক মহান আল্লাহ তা’আলার সার্বভৌমত্ত্বের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য বিদ্রোহের
শামিল । তাই এটা গুরুতর পাপ এবং এর পরিণতিও অত্যন্ত ভয়াবহ।
আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন,
اِنَّهٗ مَنْ يُّشْرِكْ بِاللهِ
فَقَدْ حَرَّمَ اللهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ ـ
وَمَاْوٰـهُ النَّارُـ
وَمَا لِلظّٰلِمِيْنَ مِنْ اَنْصَارٍـ
“কেউ আল্লাহর সাথে শরীক করলে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত
অবশ্যই নিষিদ্ধ করবেন এবং তার ঠিকানা জাহান্নাম
। যালিমদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই।” (সুরা মায়িদা- ৭২)
রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
“ তোমরা ৭টি সর্বনাশী কর্ম হতে দূরে থাক । সকলে
বলল, হে আল্লাহর রাসুল ! তা কি কি ? তিনি বললেন,
১। আল্লাহর
সাথে শিরক করা,
২। যাদু
করা,
৩। ন্যায়সঙ্গত
অধিকার ছাড়া আল্লাহ যে প্রাণ হত্যা করা হারাম করেছেন তা হত্যা করা,
৪। সুদ খাওয়া,
৫। এতিমের
মাল ভক্ষণ করা,
৬। (যুদ্ধক্ষেত্র হতে) যুদ্ধের দিন পলায়ন করা,
৭। সতী উদাসীনা
মুমিনা নারীর চরিত্রে মিথ্যা অপবাদ দেওয়া।” (বুখারী-
২৭৬৬, ৬৮৫৭)
মানুষ যাতে শিরক থেকে সতর্ক হয়, সে জন্য আল্লাহ তা’আলা তাঁর নবীর প্রতি এই বলে সতর্ক
বাণী দিয়েছেন:
وَلَقَدْ اُوْحِىَ اِلَيْكَ وَاِلَى الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِكَ ـ
لَىِٕنْ اَشْرَكْتَ لَيَحْبَطَنَّ عَمَلُكَ
وَلَتَكُوْنَنَّ مِنَ الْخٰسِرِيْنَ ـ
“আর অবশ্যই তোমার কাছে এবং তোমার পূর্ববর্তীদের কাছে ওহী পাঠানো
হয়েছে যে, তুমি যদি শিরক করো, তবে তোমার যাবতীয়
কর্ম নিষ্ফল হবেই এবং তুমি ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।” (সুরা যুমার- ৩৯)
উল্লেখিত আয়াতদৃষ্টে বড় শিরকের অপরাধ
যে কতটা ভয়াবহ হতে পারে তা অতি সহজেই অনুমেয় । শর’ই দৃষ্টিতে বড় শির্ক এত বড় পাপ যে, কার্যত একজন মানুষ
শির্কে লিপ্ত থাকলে---
* সে ইসলাম থেকে
খারিজ হয়ে যায় ।
* তার অতীত ও বর্তমানের
সকল নেক আমল বাতিল হয়ে যায় ।
* তার জন্য জান্নাত
নিষিদ্ধ হয়ে যায় এবং জাহান্নাম অবধারিত হয়ে যায় ।
* খাঁটি তওবা ছাড়া
এ গুনাহ মাফ হয় না ।
তাই আমাদের শিরক সম্পর্কে ভালোভাবে
জেনে তা থেকে বেঁচে থাকার সর্বাত্বক চেষ্টা করতে হবে। আল্লাহ
আমাদের তৌফিক দান করুন । আমিন……
0 Comments